পটুয়াখালী শহরের সকাল শুরু হয় হাজারো মানুষের কর্মচাঞ্চল্যে। সেই ব্যস্ততার ভিড়ে প্রতিদিন ভোরে দেখা মেলে এক পরিচিত মুখের—মোহাম্মদ নুর হোসেন। ভাঙাচোরা একটি ভ্যানে করে কলস ও বালতি সাজিয়ে, খালি পায়ে, পরনে মলিন জামাকাপড়—নেমে পড়েন জীবিকার তাগিদে। ২৬ বছর ধরে একই পন্থায় তিনি শহরের হোটেল, চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁয় পানি সরবরাহ করে চলেছেন। নুর হোসেনের এই জীবনসংগ্রাম শুরু হয় দুই দশকেরও বেশি আগে। সময়ের সঙ্গে বদলেছে শহরের রূপ, গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, এসেছে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বদলায়নি নুর হোসেনের জীবন। প্রতিটি কলস বা বালতি পানি সরবরাহের বিনিময়ে আয় করেন মাত্র ৫ টাকা। দৈনিক আয় গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। নুর হোসেনের পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই কন্যা। একমাত্র ছেলে ওসমান ছিলেন পরিবারের ভবিষ্যতের আশাব্যঞ্জক প্রতীক। কিন্তু মাত্র ১৬ বছর বয়সে লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে সে। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ছেলেকে হারানোর বেদনা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় এই পরিবারকে। পটুয়াখালী পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি খাস জমিতে একটি ছোট টিনের ঘরে বসবাস করেন নুর হোসেন। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম—সব কিছু মোকাবিলা করেই সেখানে কাটে তাঁদের দিনরাত্রি। নেই নিজস্ব কোনো জমি, নেই স্থায়ী কোনো ঠিকানা। নুর হোসেন বলেন, “ওসমানই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। তাকে ঘিরেই ছিল আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু আল্লাহ যা চান, সেটাই হয়। আজকে আমি শুধু টিকে থাকার জন্য এই পরিশ্রম করি। সারাদিন কষ্ট করেও অনেক সময় ঠিকমতো এক বেলার খাবার জোটে না। দুপুরে রুটি আর এক কাপ চা খেয়েই কাজ চালাই।” তিনি আরও জানান, “অনেক দিন এমন গেছে, রাতে বাড়ি ফিরে দেখি ২০০ টাকাও হয়নি আয়। সেই টাকায় বাজার করব, মেয়েদের খাবার দেব, ওষুধ কিনব—সব কিছুই ওই সামান্য টাকার উপর নির্ভর করে। থাকার মতো নিজের কোনো জায়গা নেই, তাই সরকারি জমিতে একটা ঘর তুলে আছি।” নুর হোসেনের এই গল্প যেন শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা হাজারো অবহেলিত মানুষের প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্র ও সমাজের দৃষ্টিসীমার বাইরে পড়ে থাকা এই মানুষগুলোর জন্য প্রয়োজন সহানুভূতি, মানবিক সহযোগিতা ও টেকসই পরিকল্পনা।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com