প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১০, ২০২৫, ১০:১৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১, ২০২৫, ৮:৫৭ এ.এম
টাকা না থাকলে মনোনয়ন পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগিয়াস উদ্দিন। বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই এবং টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রি হয় বলে এই নেতা দলটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দলের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে বক্তব্যের এক অংশে গিয়াস উদ্দিন বলেন, আজ আমি আপনাদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলছি। আমি বহিষ্কার হতে পারি। আই ডোন্ট কেয়ার। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি। এই রাজনীতিকে কারও কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য না। কারও কাছে মালিকানা দেওয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্বে তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন কর্মীরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করবে।’বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল বিএনপির কথা বলি। নিজ দলের কথা বলি। বিএনপির গঠনতন্ত্রে কী বলে? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই দল গঠিত ও পরিচালিত হবে। কিন্তু সেটা কী চলে? একদম স্পষ্ট না। যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদের এই দল চলতো তাহলে নেতাকর্মীরা যারা হতাশা, দুঃখ-বেদনা নিয়ে বক্তব্য দিলেন, তাদের এই দুঃখ-দুর্দশা থাকতো না। কেন থাকতো না? কারণ, আপনার নেতা নির্বাচন করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকতো, আপনার ভোটে যদি সর্বস্তরের নেতৃত্ব তৈরি হতো তাহলে আপনাকে মর্যাদা দিতে নেতা বাধ্য থাকতো। আপনাকে অবজ্ঞা করে কোন নেতা চলতে পারতো না। নেতার ইচ্ছামতো দলকে পরিচালনা করতে পারতো না। নেতা ইচ্ছে করলেই লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে পারতো না। এই গণতন্ত্র নাই বলে আজ প্রকৃত নেতার কোনও মূল্যায়ন নেই। প্রকৃত নেতা-নেত্রীদের মূল্যায়ন নেই এবং নেতা যারা হয় তারা হয়ে যায় শাসকের মতো স্বৈরতান্ত্রিক। আমার ইচ্ছেমতো যা খুশি তা করবো, আমার তো জবাবদিহি করার কোনও জায়গা নাই। সেজন্য যা ইচ্ছে তা করে। বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘দলের মধ্যে গণতন্ত্র থাকবে না। আর আমরা সারা দিন চিৎকার করবো, রাষ্ট্রে গণতন্ত্র চাই। তা চাইলেই কি হয়ে যাবে? এই চাওয়াটাও তো অন্যায়। নিজের দলের মধ্যে গণতন্ত্র নাই। আর রাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্র চাই। এটা কী হতে পারে? এটা তো হতে পারে না।’বিএনপি দলের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলদের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন,গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে দল পরিচালনা করার জন্য। সেখানে লেখা হয়েছে, সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে কাউন্সিলের ভোটের মাধ্যমে। এই অধিকার আমাদের না দিয়ে অ্যাপয়েন্টেড নেতাকর্মী বানানো হয়। কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় যেন চাকরি করি আমরা, গোলামি করি আমরা দাসত্ব করি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে ওই বাড়িতে ফুলের মালা, ফুলের তোড়া নিয়ে মানুষের ভিড় জমে যায়। সেই নেতা হোক সংগ্রামী, হোক সংগ্রাম করে নাই হোক সে অসৎ কিন্তু সে তো অ্যাপয়েন্টেড হয়েছে। একটা পদ পেয়েছে। সবাই ফুলের মালা তোড়া নিয়ে গেলে সে মনে করে তার কাছে গেলে সে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে পারে পদপদবি পেতে পারে এই লালসায়। নির্লজ্জ-বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়রকে নেতৃবৃন্দকে জুনিয়রের কাছে ফুল দিতে হয়, জুনিয়রের কাছে গিয়ে তোষামোদি করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে এই অবস্থা চলতে পারে না।’ টাকা দিয়ে মনোনয়ন বিক্রি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মধ্যে কোটি কোটি টাকায় মনোনয়ন বিক্রি করা হয়। এ দেশ আমরা এই কারণেই স্বাধীন করেছি ? এজন্য আমরা আন্দোলন করি সংগ্রাম করি? নিশ্চয়ই না। ভালো মানুষের অভাব নেই বিএনপিতে। ভালো মানুষের অভাব নেই অন্য কোনও দলেও। কিন্তু ভালো মানুষগুলোর টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ টাকার গাট্টি দিয়ে দিতে হবে। এমন রাজনীতি যদি দেশে থাকে তাহলে বাংলাদেশের আকাশে কখনও ভালো সূর্য উদয় হবে না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা বিএনপির উদ্যোগে চাঁদপুর মোহনায় এক বনভোজন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্যসচিব সাহেদ আহমেদ বলেন, তার (মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন) এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। এই বক্তব্যের জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তা ছাড়া তিনি যে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসে ২০০১ সালে দলীয় নমিনেশন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তখন কি তিনি টাকা দিয়ে নমিনেশন পেয়েছেন? নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপন মামুন মাহমুদ বলেন,সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও সবার দৃষ্টিতে এসেছে। তৃণমূল বিএনপির সকল নেতাকর্মীর মনে এ বিষয়টি আঘাত লেগেছে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনও ধরনের নির্দেশনা দেয়নি। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আহ্বায়ক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপদে রয়েছেন। এর আগে তিনি ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com