ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে উক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে সদরপুর থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হাসান অভিযুক্ত শিক্ষকে ধরতে মাঠে নামে। অবশেষে তার চরভদ্রাসনের এক আত্মীয়র বাড়ীতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়।ঘটনায় জানা যায় বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক মোঃ রহিস সিকদার দীর্ঘদিন ধরে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীকে নানা সময় মৌখিক ও শারীরিকভাবে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।মান সম্মানের ভয়ে ঐ শিক্ষার্থী ও তার পরিবার প্রথমে চুপ থাকলেও ঐ শিক্ষক সংশোধন না হওয়ায় পরে বিষয়টি ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বিল্লাল হোসেন,সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) লাভলী আক্তার এবং সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) মাফ্রোজা জাহানকে অবগত করেন।প্রধান শিক্ষক ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা না করে এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা কে অবগত না করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।এ ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে কিছুই না জানার ভান করেন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এক পর্যায়ে বলেন, বিষয়টি আমার প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষক জানতো কিন্ত তারা আমাকে বিষয়টি জানায়নি। আপনি এ ব্যাপারে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা গ্রহন করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন আমি জানার আগেই সাংবাদিকেরা সব বের করেছেন।প্রধান শিক্ষকের তথ্যমতে যে দুইজন শিক্ষকের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন তাদের একজন ঐ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) লাভলী আক্তার। মুঠোফোনে লাভলী আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চলতি মাসের ৫ তারিখ আমার বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী আমাকে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে আমি সাথে সাথে আমার সহকর্মী ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাফ্রোজা জাহানকে অবগত করি।মাফ্রোজা জাহান সাথে সাথে প্রধান শিক্ষককে অবগত করলে প্রধান শিক্ষক ঐ ছাত্রীকে ডেকে তাৎক্ষণিক কথা বলেন।ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে সব ঘটনা খুলে বললে। তিনি বিষয়টি দেখবো বলে শিক্ষার্থীকে চুপ থাকতে বলেন। অপর শিক্ষক ঐ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাফ্রোজা জাহান মুঠোফোনে বলেন, ঘটনা জানামাত্র প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছি।শিক্ষার্থী বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে শিক্ষার্থীর পরিবার প্রধান শিক্ষকের বিচারের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্ত প্রধান শিক্ষক ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা গ্রহণ না করায় ঐ শিক্ষার্থীকে আবারও কুপ্রস্তাব দেয়।অবশেষে শিক্ষার্থীর বাবা সুব্রত বিস্বাস নিরুপায় হয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা বলেন,বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।অভিযোগের পর থেকেই উক্ত শিক্ষক পলাতক ও মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো। শুক্রবার (০৯ মে) গভীর রাতে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস টিম চরভদ্রাসন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান জানান, শিক্ষক প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে অভিযোগ স্বীকার করেছে। “অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে পাঠানো হবে।”
এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে এর সাথে জড়িত শিক্ষকের এবং তথ্য গোপন ও অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয়ায় প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com