জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, কিন্তু থেমে যাননি মানিক রহমান। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমে পা দিয়েই লিখে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন এই মেধাবী ছাত্র। সদ্য প্রকাশিত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে মেধাতালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি।
রবিবার (১১ মে) প্রকাশিত ফলাফলে এই তথ্য জানা যায়। মানিক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা মিজানুর রহমান একজন ব্যবসায়ী এবং মা মরিয়ম বেগম একজন
কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মানিক বড়।
জন্মগতভাবে দুই হাত না থাকলেও মানিকের মনোবল বরাবরই দৃঢ়। বাবা-মায়ের সাহস ও ভালোবাসায় পা দিয়েই লেখাপড়ার পাশাপাশি কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। মানিক জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন। জাবির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন তিনি। তবে হাবিপ্রবিতে সরাসরি মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ায় আনন্দিত মানিক।
ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার স্বপ্ন দেখেন মানিক। তার ভাষায়, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া এবং একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। আশা করি এবার সেই স্বপ্নপূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।’
মানিক আরও বলেন, ‘আমার প্রথম অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা। এরপর আমার শিক্ষক ও বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছেন। আমি যেন নিজের পাশাপাশি তাদের স্বপ্নও বাস্তবায়ন করতে পারি, সেই চেষ্টাই থাকবে।’
২০২২ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন মানিক। এসএসসিতে ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জনের পাশাপাশি পিইসি ও জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তিনি।
ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত বাবা-মা। মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘সব কিছুর মূলে আল্লাহর রহমত। দুই হাত না থাকলেও আল্লাহ ওকে বিশেষ দক্ষতা দিয়েছেন। তার অদম্য মনোবলই তাকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।’
অন্যদিকে বাবা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছেলের ইচ্ছা ছিল বুয়েটে পড়ার, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সেখানে তাকে ‘অযোগ্য’ বলা হয়। তবে হাবিপ্রবিতে সে সুযোগ পেয়েছে। ওর স্বপ্ন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া।’
প্রতিবন্ধকতা নয়, মানিকের জীবন প্রমাণ করে— ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে কোনো স্বপ্নই অধরা থাকে না।