প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ১৪, ২০২৫, ২:০১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৩, ২০২৫, ৯:২৮ এ.এম
শিরোনাম,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ হওয়া এক পিতার আর্তনাদ
উপসংহার,শহীদ রাশেদুলের কবর নদীতে বিলীনের শঙ্কা
“নদীভাঙনের মুখে শহীদের সমাধি, সংরক্ষণের দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর”।
ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত কুড়িগ্রামের তরুণ রাশেদুল হকের কবর এখন নদীভাঙনের মুখে। নাগেশ্বরী উপজেলার চর কাঠগিরি গ্রামে বালুর চরে দাফন করা হয় এই শহীদকে। কিন্তু ভাঙনপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় কবরটি যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন ২২ বছর বয়সী রাশেদুল। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে তাঁর মাথা, গলা ও পিঠে গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সহযোদ্ধারা তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পথেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরে ৭ আগস্ট কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নিজ গ্রাম নুনখাওয়ার চর কাঠগিরিতে বালুর চরে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
চরাঞ্চলের নদী-লাগোয়া জায়গায় কবরটি হওয়ায় তা প্রচণ্ড ঝুঁকিতে রয়েছে। বালু দিয়ে সামান্য উঁচু করে রাখা হলেও বৃষ্টিতে তা ধুয়ে গিয়ে এখন অনেকটা নিচু হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, সামান্য বন্যা এলেই কবরটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
শহীদ রাশেদুলের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, “মাথা, বুকে ও পিঠে গুলিবিদ্ধ ছেলের নিথর দেহ দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার ছেলেকে কে কোথায় কবর দিয়েছে, কিছুই জানি না। পরবর্তীতে শুনি, বালুর চরে দাফন করা হয়েছে। নিজে যতটা পেরেছি, কবরটি রক্ষার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, অন্তত আমার শহীদ সন্তানের কবরটি যেন সংরক্ষণ করা হয়। তা না হলে অচিরেই কবরটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।”
রাশেদুলের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওমরা মোর বুকের ধন কাড়ি নিছে। মোর কলিজা তো আর নাই। এই যদি কবরও কোনাও না থাকে, মুই কুটি যায়া কাঁন্দিম!”
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শহীদ রাশেদুল ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের সন্তান। সংসারের হাল ধরতে এবং একটি উপার্জনের পথ খুঁজতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় যান। উঠেছিলেন যাত্রাবাড়ীর দেখদিবটতলার বড় ভাই আলমগীর হোসেনের ভাড়া বাসায়। সেখান থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিতে যান তিনি।
স্থানীয়রা বলেন, “এই কবর শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এটি একটি সময়, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাসের প্রতীক। ২০২৪ সালের স্বাধীনতার লড়াইয়ে যে শহীদ জীবন দিলেন—তার কবর আমাদের গর্ব। যদি এই কবর সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যায়, তবে এর দায় আমাদের সকলের।”
কুড়িগ্রাম জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, আপনার মাধ্যমে আমি জানতে পারলাম শহীদ রাশেদুলের কবর বিলীনের পথে। এটা যদি তীর রক্ষা বাঁধ দিয়ে যদি সংরক্ষণ করা যায় সে প্রচেষ্টাও আমরা করব। আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমাদের শহীদদের শেষ সৃতিটুকু ধরে রাখতে। শহীদের কবরই যদি না থাকে, আগামী প্রজন্ম কিভাবে জানবে কে ছিলেন রাশেদুল?
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ ” বলেন, “শহীদ রাশেদুলের কবরটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবার এবং এলাকাবাসীর দাবি, সরকার যেন দ্রুত শহীদ রাশেদুলের কবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। যেন বন্যা বা নদীভাঙন এলেও এই শহীদের কবর নদীতে হারিয়ে না যায়—রয়ে যায় ইতিহাস হয়ে, আগামী প্রজন্মের জন্য।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com