প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ৮, ২০২৫, ৩:৪৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৫, ২০২৫, ৬:৩৯ এ.এম
কুড়িগ্রামে ভিজিএফ চাল আত্মসাৎ: গুদাম থেকে উদ্ধার ৭.৫ মেট্রিক টন, দরিদ্ররা রইল খালি হাতে

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল পাওয়ার আশায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত দরিদ্র মানুষ। কিন্তু দিনের পর দিন অপেক্ষার পরেও তারা এক মুঠো চালও পাননি।অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের কয়েকটি গুদামে মজুদ অবস্থায় পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ সরকারি সহায়তার চাল। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জুন রাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব গুদাম থেকে ৭.৫ মেট্রিক টন চাল উদ্ধার করা হয়। অভিযানে অংশ নেয় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরাও। অভিযানের সময় অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৮ হাজার পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট ৮০ মেট্রিক টন চাল। প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, চাল বিতরণের আগেই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম ও কয়েকজন ইউপি সদস্য গোপনে স্লিপ বিক্রি করে দেন। পরে স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী চক্র সেই স্লিপ ব্যবহার করে সরকারি চাল উত্তোলন করে গুদামে মজুদ রাখে।স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান ও আমিনুর রহমান জানান, প্রথমে কিছু সাধারণ মানুষ স্লিপ পেলেও বেশিরভাগ স্লিপ গোপনে বিক্রি হয়ে যায়। তাদের দেওয়া তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে উদ্ধার হওয়া চালের কোনো বৈধ কাগজপত্র বা স্টক রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি।তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা যে পরিমাণ চাল উদ্ধার করেছি, এটি কেবল দৃশ্যমান অংশ মাত্র। ধারণা করা হচ্ছে, এর বাইরে আরও চাল আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।”স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট তৈরি করে দরিদ্র মানুষের নাম ব্যবহার করে স্লিপ ছাপিয়ে তা বিক্রি করে আসছেন। হাফিজুর রহমান জানান, “আমার চাচার নাম তালিকায় থাকলেও তিনি চাল পাননি। অথচ তার নামেই স্লিপ দিয়ে কেউ চাল তুলে নিয়েছে।”আমিনুর রহমান বলেন, “একজন ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন যে তিনি ১০০টি স্লিপ কিনেছেন এবং সেই স্লিপ ব্যবহার করে চাল উত্তোলন করে গুদামে রেখেছেন। তার পরিকল্পনা ছিল, পরে চালগুলো বেশি দামে বিক্রি করা।”এ বিষয়ে সন্তোষপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম বলেন, “পরিষদের বাইরে কোনো ইউপি সদস্য স্লিপ বিক্রি করলে সে বিষয়ে আমি জানি না।” তবে প্রশ্ন উঠেছে, পরিষদ থেকেই স্লিপ ইস্যু হলে চেয়ারম্যান হিসেবে তার অজ্ঞ থাকা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?নাগেশ্বরী উপজেলার ইউএনও সিব্বির আহমেদ বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” তবে ৪ জুন রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য পাওয়া যায়নি।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com