প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ৬, ২০২৫, ২:২০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৪, ২০২৫, ৯:৪৩ এ.এম
গায়ের জোরে অধ্যক্ষ একেএম শাহাবুদ্দিন • দুই প্রতিষ্ঠানে একযোগে চাকরি করেছেন অধ্যক্ষ একেএম শাহাবুদ্দিন

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে, নীয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে এক প্রকার গায়ের জোরে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে এ.কে.এম. শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
তথ্য বলছে, এ.কে.এম. শাহাবুদ্দিন ২০০৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পূর্ব ওমরাবাজ মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০১০ সাল থেকে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি একইসাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন এবং উভয় প্রতিষ্ঠান থেকেই নিয়মিতভাবে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন। যা চাকরীবিধিমালা অনুযায়ী সঙ্গত নয়।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও কেবল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরটি এমপিওভুক্ত। ডিগ্রি স্তরটি এখনো নন-এমপিও। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে ২০২২ সালের ২৯ মার্চ তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৭ এপ্রিল নিয়োগপত্র ও ১৬ মে তার যোগদানের অনুমোদন প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এমপিও কমিটির সভায় এই নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলে। সভায় সুপারিশ করা হয় যে, এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য অধ্যক্ষ নিয়োগের পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত ছিল। পাশাপাশি বলা হয়, যেহেতু ডিগ্রি স্তরটি এমপিওভুক্ত নয়, তাই একেএম শাহাবুদ্দিনকে এমপিওভুক্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের এমপিওভুক্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও কার্যত ডিগ্রি স্তরের সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এমনকি নিজেই নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে কলেজের প্রশাসনিক নথিপত্র ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন।
কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে চারবার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নেন, যার প্রতিটিতেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে জাল স্বাক্ষর, ২০১৯ সালে বিধিবহির্ভূত প্রক্রিয়া এবং ২০২২ সালের নিয়োগটিও মাউশির সভায় বাতিল হয়। তারপরও তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন গায়ের জোরে।”
আর এক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা একাধিকবার লিখিতভাবে অনিয়মের অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনিক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় এখনো তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একজন প্রধান যদি নিজেই নিয়ম না মানেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখানো কীভাবে সম্ভব?”
অভিযোগ রয়েছে, এ.কে.এম. শাহাবুদ্দিন পতিত আওয়ামী লীগের হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন শাখার শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের একাধিক ছবি রয়েছে। অভিযোগকারীদের মতে, এই রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি বারবার অনিয়মের মাধ্যমে অধ্যক্ষের দায়িত্ব কুক্ষিগত করে রেখেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ.কে.এম. শাহাবুদ্দিন বলেন, “আমি ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেই, (এই কথাটি পুরোপুরি মিথ্যে)
তারপরে জিজ্ঞাসা করলে সে তখন বলে আমি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলাম। মাদ্রাসায় হাজিরা দিয়ে একটি ক্লাস নিয়ে কলেজে আসতাম। তবে একসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অন্যায়—এটা আমি স্বীকার করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। ডিগ্রি স্তরে অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ায় ডিগ্রি পর্যায়ের কাজ আমি চালিয়ে যাচ্ছি।’
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বিষয়ে জানতে চাইলে
তিনি জানান, “আমি হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম, তবে বড় কোনো পদে ছিলাম না।”
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com