৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রাশাসনিক জটিলতায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে নতুন ভবন উদ্বোধনের আগেই জানালা, দরজাসহ প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে পুরাতন ভবনের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে। হাসপাতালটির বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। শয্যার অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অসংখ্য রোগী বারান্দায় পড়ে আছে। বাথরুমগুলো অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। দেখার যেন কেউ নেই সুনামধন্য সরকারি হাসপাতালটির। বর্তমানে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রচুর সংখ্যক রোগী ও পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যশোর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের পাঁচটি আবাসিক ভবন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় যা ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ২৯ আগষ্ট নির্মান কাজ শেষ হয়। এছাড়া এ ভবনে অক্সিজেন প্লান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, এ হাসপাতালে প্রতিদিন বর্হিবিভাগেই ৫/৬ শ রোগী আসে। এছাড়া আরও ১ থেকে দেড় শত রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩২টি। খাতা কলমে কর্মরত দেখানো হচ্ছে ১৭ জন চিকিৎসককে। কিন্তু ১৭ জনের ৩ জন দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন ৪ জন চিকিৎসক। এছাড়া মেডিকেল ছুটি ও ট্রেনিংএ আছেন ২ জন। বাকি ৮ জনের ২ জন প্রশাসনিক পদে কর্মরত। বর্তমানে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে দেশ সেরা এ মডেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে অনেক চিকিৎসক খাতা কলমে হাসপাতালে উপস্থিত থাকলেও সরেজমিনে তারা দীর্ঘদিন যাবত অনুপস্থিত। এদের মধ্যে ডাক্তার মৃদুল কান্তি ১০ বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত কিন্তু খাতা-কলমে বহাল তবিয়তে আছেন। এছাড়া আরও দুই চিকিৎসক দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। পদ শুণ্য না হওয়ায় চিকিৎসক পদায়ন করছেনা কর্তৃপক্ষ। যার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মৃদুল কান্তি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ২০১৪ সালের পর আর কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। একইভাবে মেডিকেল অফিসার গোলাম রসুল ২০১৯ সাল থেকে এবং মেডিকেল অফিসার সাইমা নাহিদ শান্তা ২০২১ সাল থেকে এবং অনুপস্থিত রয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।জানা গেছে, যে সকল চিকিৎসকরা চৌগাছা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন, রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারনে তারাও বদলি নিতে চেষ্টা করছেন। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে অনুপস্থিত চিকিৎসকরা বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা আর কর্মস্থলে ফিরে আসবেননা এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।অথচ এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসা সেবায় একাধিক বার দেশ সেরা হিসাবে পুরস্কার পেয়ে আসছে। এ উপজেলা ছাড়া ও এখানে পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলা থেকে শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এ অঞ্চলের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। সে মোতাবেক নতুন ভবন নির্মিত হয়। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরিকৃত ১০০ শয্যা চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি এখনও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে,।হাসপাতালটির নতুন ভবন চালুর দাবিতে গত ৫ জুন এবি পার্টি উপজেলা শাখার উদ্যোগে মানবন্ধনের আয়োজন করে। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ডাক্তারদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবনের অনুমতি ছাড়াই কর্মকর্তারা ভবনে বসবাস করছেন। ছয় দফা দাবী সংবলিত স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যশোর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছে দেন। জরুরীভাবে হাসপাতালটির নতুন ভবন চালু, প্রশাসনিক জটিতলা দূরীকরণসহ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স নিয়োগ করে ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।চৌগাছা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহসানুল মিজান রুমি বলেন, আমি অল্প কিছুদিন আগে এ হাসপাতালে যোগদান করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে অনুপস্থিত তিনজনের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এছাড়া ভবণ নির্মান শেষ হলেও নতুন ভবনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আমরা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে অতিসম্প্রতি আবারো আবেদন করেছি। আশা করা যায় সমস্যার সমাধান হবে।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com