প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২২, ২০২৫, ৮:৩৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২২, ২০২৫, ৬:০৬ এ.এম

আনোয়ার হোসেন ফরিদপুর শহরে ব্যবসা করে নিজে একটি বাড়ি করেছেন। সারাদিন তিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দেন। এর মাঝেই ব্যবসায়িক খাতিরে অনেকের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
একদিন ব্যবসায়িক কাজে বিকালবেলা ফরিদপুর শহরে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে ইকবাল নামের এক ব্যক্তির দেখা হয়, যিনি কিছুদিন আগে তার সাথে পরিচিত হন। ইকবাল জানতে চান, “আনোয়ার ভাই, কোথায় যাচ্ছেন?”
আনোয়ার হোসেন বলেন, “বাজারে যাচ্ছি, একটু কাজ আছে।”
তখন ইকবাল বলেন, “চলুন, আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। আমিও বাজারে যাচ্ছি।”
তারা যখন রিকশায় উঠতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাদের সামনে একটি পাজেরো গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়িতে বসে থাকা একজন কোট-টাই পরা ভদ্রলোক ইকবালকে উদ্দেশ করে বলেন, “ভাই, কাজ তো হয়ে গেছে, গাড়িতে উঠেন তাড়াতাড়ি।”
আনোয়ার হোসেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ইকবাল তাকে প্রায় জোর করেই সেই গাড়িতে উঠিয়ে নেন। আনোয়ার বিষয়টিকে ইকবালের পরিচিত লোকজনের সঙ্গে সাধারণ সম্পর্ক ভেবেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে চলতে থাকেন।
গাড়িটি শহরের একটি দামী রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে আগে থেকেই কিছু লুঙ্গি পরা অসহায় মানুষ অপেক্ষায় ছিল। গাড়ির পেছন থেকে একটি পাটের বস্তা নামানো হয় এবং সবাই মিলে রেস্টুরেন্টের একটি নির্জন কক্ষে চলে যায়।
সেই কক্ষে ঢুকে, গাড়িতে আসা ভদ্রলোক বস্তা খুলে আনুমানিক ১০০০ টাকার ৮০-৯০ বান্ডিল টাকা মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়। কোন গোনাগুনতি ছাড়াই টাকাগুলো সবাই মাছের মতো ভাগ করে নিয়ে নেয়।
সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় আনোয়ার হোসেনকেও ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় জানায় সেই ভদ্রলোক।
সেদিনের ঘটনাটি দেখে ঘরে ফিরে আসেন আনোয়ার হোসেন। এরপর ইকবালের সাথে ৫-৬ দিন কোনো যোগাযোগ হয়নি।
পাঁচদিন পর আনোয়ার ইকবালকে ফোন করে বলেন, “ইকবাল ভাই, আপনার সাথে একটু কথা ছিল।”
ইকবাল উত্তর দেন, “আমি খুব ব্যস্ত আছি, এখন সময় দিতে পারব না।”
এই ঘটনার পর থেকে আনোয়ার হোসেনের ব্যবসায় মনোযোগ থাকে না। তার মন পড়ে থাকে একটিই জায়গায়—"ওইভাবে যদি আমিও অনেক টাকা ইনকাম করতে পারতাম!"
এক সপ্তাহ পরে আবার ইকবালের সাথে দেখা হলে আনোয়ার তাকে জানায়, সে ওই ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে আগ্রহী।
ইকবাল জানায়, প্রথম অবস্থায় মিনিমাম ৫০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
আনোয়ার হোসেন সদ্য কেনা তার বাড়িটি বিক্রি করে এক কোটি টাকা তুলে ইকবালের হাতে তুলে দেন।
এরপর থেকে আনোয়ার হোসেন আর কখনও ইকবালের দেখা পাননি।
এভাবেই কেটে গেছে এক বছর। শোনা যায়, ফরিদপুর শহর থেকে এই নগরকান্দা থানা’র কাইচাউল ইউনিয়ন, দঃ কান্দি গ্রামের, হালিম মাতুব্বরের ছেলে ইকবাল অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
টাকা হারিয়ে কষ্টে ও হতাশায় অন্তত তিনজন মানুষ মারা গেছেন বলে শোনা যায়।
আজও ইকবাল ফরিদপুর শহরে নানা ছলচাতুরি ও প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নতুন নতুন ফন্দি করছে।
তার সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নামধারী লোকের যোগসাজশ থাকার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস করছে না।
হায়রে বাংলাদেশের বাস্তবতা! প্রতারকরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায়, আর সাধারন মানুষ স্বপ্ন হারায়।