১৯৯১-এর সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশকেরও বেশি সময়, কিন্তু সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দারা এখনও প্রতিটি জোয়ারের সঙ্গে নতুন আতঙ্ক বয়ে আনেন। সাগরের ধাক্কা ঠেকাতে সেবার যেভাবে তড়িঘড়ি করে যশোরী বেড়িবাঁধ তোলা হয়েছিল, সেটি এখন ভেঙে-বিলীন—বড় অংশ দখলে নিয়েছে জাহাজভাঙা ইয়ার্ড। ফলে আলেকদিয়া থেকে সিটি গেট পর্যন্ত নয় কিলোমিটার উপকূলে সমুদ্র আর জনপদ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
জোয়ারে জল, ভাটায় কাদা: প্রতিদিনই বাড়িঘর, সড়ক, ফসলি জমি লবণাক্ত জলে ডুবে যায়; ভাটার পরে কাদায় থেঁতলে যায় যাতায়াত।
শিক্ষা ও জীবিকায় বিপর্যয়: হাঁটু-জল মাড়িয়ে স্কুলে পৌঁছতে হয় শিশুদের; বৃষ্টির মৌসুমে শিক্ষ কার্য ক্রম ব্যহত । সদা ক্ষতির ভয় নিয়েই দিনকাটে পরিবারগুলোর।
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীগর্ভে বিলীন—শত শত পরিবার ঘরহারা হয়েছে বারবার, কিন্তু দারিদ্র্য ও বিকল্পের অভাবে এখানেই টিকে আছেন। স্থানীয় এক জেলে বলেন, ‘আমাদের ঘর ভাসায় যে পানি, সেই পানিই তো নৌকা বেয়ে আমাদের পেটও ভরায়’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, “জমি অধিগ্রহণ না করে টেকসই বাঁধ সম্ভব নয়।”
ইয়ার্ড মালিকদের পাল্টা বক্তব্য, “দলিলমূলে জমি কিনেছি; জাহাজভাঙা শিল্পে হাজার মানুষ কাজ করে, সরকারও রাজস্ব পায়—শিল্প গুটিয়ে বাঁধ তোলা যুক্তিযুক্ত নয়।”
জমি ছাড়ো–বাঁধ তোলো: দুই পক্ষের টানাপড়েনে বছর কেটে যাচ্ছে।
সরকারি নোটিশও অকার্যকর: দখল ছাড়ার নির্দেশ বারবার দেওয়া হলেও বেশির ভাগ ইয়ার্ড এখনও বাঁধের জমি আঁকড়ে আছে।
-টেকসই সুপ্রশস্ত বেড়িবাঁধ—সমুদ্রের আঘাত সামাল দিতে স্থায়ী কাঠামো।
-স্বচ্ছ ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহণ-নীতিমালা—কে কতটুকু জমি দেবে, সেটা স্পষ্ট করা।
-দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র—ঝড়ের আগাম বার্তায় নিরাপদ ঠাঁই নিশ্চিত করা।
-ইয়ার্ড এলাকায় কঠোর পরিবেশ ছাড়পত্র—জলের স্বাভাবিক পথ যাতে বন্ধ না হয়।
-বাঁধ রক্ষায় আইনি সক্রিয়তা—দখলদারিত্বে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স প্রদর্শন।
নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহম্মেদ জানান,“বাঁধের জমি ছাড়া কাজ এগোনো যাবে না। মন্ত্রণালয় আইনি পদক্ষেপ নিলে প্রকল্পের নকশা ও নির্মাণ আমরা দ্রুত শুরু করতে পারব।” কিন্তু জনগণের প্রশ্ন, কবে ? বর্ষা মানে আবারও ভাঙন, আবারও ঘরহারা হওয়া।
ইতি কথা-
শিল্প-রাজস্ব আর উপকূলবাসীর জীবন নিরাপত্তার দ্বন্দ্বে আজ অস্তিত্বের দোলাচলে। সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউ এখানে কেবল স্মৃতি নয়—আগাম দিনের সতর্কবার্তা। তাই সমন্বিত সিদ্ধান্ত, আইনি দৃঢ়তা ও টেকসই পরিকল্পনা নিয়েই উপকূলের মানুষকে বাঁচানোর সময় এখন, না হলে পরের বড় ঢেউ আরেকটি ১৯৯১-কে আবারও ইতিহাসে ফিরিয়ে আনবে।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com