কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের কোলকিহাড়া এলাকায় নদীর উপর নির্মিত একটি কাঠের ব্রীজ বদলে দিয়েছে স্থানীয় মানুষের জীবনধারা। সরকারের অর্থায়ন ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় নির্মিত এই ব্রীজ এখন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের প্রধান ভরসা।
ব্রীজটি নির্মাণের নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া। তার নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এ কাঠের ব্রীজটি বর্তমানে ৪০টিরও বেশি গ্রামের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
এক সময় এই নদী পার হতে স্থানীয়দের খেয়া নৌকার উপর নির্ভর করতে হতো। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বাড়লে নৌকা চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, জীবনের ঝুঁকি এবং নানা ভোগান্তি ছিল এই অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীদের কষ্ট ছিল সীমাহীন।
এখন সেই সব দিন কেবল স্মৃতি। কাঠের ব্রীজের কারণে যাতায়াতে এসেছে গতি ও নিরাপত্তা। স্থানীয় গৃহবধূ রহিমা খাতুন বলেন, “এই ব্রীজ হওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পেতাম। এখন আর কোনো চিন্তা নেই।”
কৃষক মজিবর রহমান জানান, “আগে বাজারে যেতে হলে নৌকা ধরতে হতো। এখন হাঁটলেই পৌঁছে যাই, অনেক সময় বাঁচে।”
এই ব্রীজ এখন শুধু কাঠের তৈরি একটি অবকাঠামো নয়—এটি মোহনগঞ্জবাসীর স্বপ্নপূরণের প্রতীক। এটি শুধু স্থানীয়দের নয়, বরং রাজিবপুর উপজেলা সদর, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতেও সহজতর করেছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষিকাজে এসেছে ব্যাপক গতি।
ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন বাবুল বলেন, “মানুষের বহু দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরে আমি গর্বিত। এই ব্রীজ মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি বড় পরিবর্তনের প্রতীক। তবে আমি জোরালোভাবে অনুরোধ জানাই, যেন কোলকিহাড়া নদীর ওপর একটি স্থায়ী, টেকসই, পাকা ব্রীজ নির্মাণ করা হয়।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে এলাহি বলেন, “এটি আমাদের উপজেলার জন্য একটি বড় সাফল্য। এই ব্রীজটি অস্থায়ী কাঠামো হলেও মানুষের উপকারে এসেছে অনেক। আমরা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে পাকা ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি।”
গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন কিভাবে একটি জনপদের জীবনধারায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, কোলকিহাড়ার কাঠের ব্রীজটি তার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।