বিদেশে থাকাকালীন দেশে ফিরে কিছু করার প্রচন্ড ইচ্ছা মনে লালন করতেন আল আমিন। দেশে ফিরে স্থাপন করেন হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক কারুপণ্যের বানানোর কারখানা। পরিবেশ বান্ধব ও দেশে-বিদেশে হোগলা পাতার দড়ির কারুপণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাত্র আড়াই বছরেই সফল এ উদ্যোক্তাকে। নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে ১৪ জন তরুণ-তরুণী ও নারীর। এখন দেশে তার প্রতিমাসে লাভ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বলছিলাম ভোলা সদর উপজেলাধীন চরসামাইয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উদ্যোক্তা আল আমিনের কথা। তিনি গ্রামেই স্থাপন করেন কারখানাটি। তার কারখানায় উৎপাদিত এসব পণ্যের দাম শুরু ২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত। সরেজমিনে জানা যায়, আল আমিনের বাবা মো: মোসলেম দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে হোগলা পাতার দড়ি বানানোর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুরু থেকেই বাবার সঙ্গে এ পেশায় জড়িত ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ২০১০ সালের দিকে ধারদেনা করে পাড়ি জমান ওমানে। সেখানে দীর্ঘ ১ যুগ প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০২২ সালের দিকে দেশে ফিরে স্থাপন করেন হোগলা পাতার দড়ির কারুপণ্য বানানোর কারখানা। বিনিয়োগ করেন প্রায় ১৪ লাখ টাকা। কারুপণ্যের মূল উপাদান হোগলা পাতা দড়ির যোগান নিজেদের কাছে থাকায় বেগ পেতে হয়নি তার। কারখানাটি ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ১০টি আধুনিক মেশিনের সাহায্যে কর্মীরা হোগলা পাতার দড়িকে সুতা দিয়ে প্রথমে গোল-লম্বাসহ প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট আকারে সেলাই করেন। এরপর কয়েকটি ধাপ শেষে ঝুঁড়ি, পাপস, প্লেসমেট, ফুলদানি, মাথার ক্যাপসহ অন্যান্য পণ্যকে পূর্ণাঙ্গ রুপ দেওয়া হয়। কারখানাটিতে কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন ওই গ্রামের রেহানা, সেলিনা বেগম। তারা বলেন, কাজের ওপর আমাদের আয় নির্ভর করে। যতবেশি পণ্য তৈরি করতে পারব, ততবেশি টাকা আয় হয়। প্রতিমাসে প্রায় ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারি। এসব টাকা স্বামীর স্বল্প আয়ের সংসারে খরচ করতে পারি। শিক্ষার্থী মিম, খাদিজা ও তুহিন বলেন, আমরা পড়াশোনার পাশাপাশি কারুপণ্য বানানোর কাজ করি। যা উপার্জন হয় এতে আমাদের পড়াশোনার খরচ নিজেরাই বহন করতে পারি। বাকি টাকা বাবা-মাকে দেই। তরুণ উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, ভোলা জেলায় আমরাই সর্বপ্রথম হোগলা পাতার দড়ির ব্যবসা শুরু করি। দীর্ঘ ২৮ বছর পারিবারিকভাবে হোগলা পাতার দড়ির ব্যবসার জড়িত। গ্রামের নারী কারিগরদের হাতে বানানো এসব দড়ি ঢাকায় পাঠানো হত। ঢাকায় হোগলা পাতার দড়ি পাঠানোর পর সেখানের কারুপণ্য বানানোর বিভিন্ন ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখার পর মাথায় আসলো আমিও বানাব। এরপর বিদেশ চলে যাই এবং বিদেশে থাকাকালীন ভাবতে থাকি, যদি নিজেই হোগলা পাতা দড়ি দিয়ে কারুপণ্য বানাতে পারি তাহলে বাবার ব্যবসাটার আরও পরিধি বাড়বে। যেহেতু কাঁচামাল আমাদের কাছেই রয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই ১ যুগ পর দেশে ফিরে কারখানা স্থাপন করি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। পুরো টাকাটা বিদেশ থাকাকালীন সঞ্চয়ের। তিনি বলেন, আমি এখন সফল। কারিগরদের মজুরি পরিশোধের পর প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। আমার কারখানায় ১৪ জন কারিগর কাজ করেন। কারখানায় বানানো পণ্য এখনও আমি নিজে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি না। যারা রপ্তানিকারক রয়েছেন তাদের কাছে বিক্রি করি তারাই বিদেশে রপ্তানি করেন। বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি হ্যান্ডিক্রাপটের অধিকাংশ পণ্য তৈরি করি, দাম শুরু প্রকারভেদে ২৫ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার ব্যাপার হলো আমার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমি চাই এ খাতে বড় উদোক্তারা এগিয়ে আসুক, এতে ভোলায় বেশি পরিমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ভোলার শিল্পনগরী কর্মকর্তা মো: হাবিবুল্লাহ বলেন, প্লাস্টিকের পরিবর্তে হোগল পাতার দড়ির তৈরি বিভিন্ন কারুপণ্য বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভোলাতে সর্বপ্রথম হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে কারুপণ্য তৈরি করছেন উদ্যোক্তা আল আমিন। বিসিক তার পাশে আছে। ভোলাতে এ শিল্পটি অনেক সম্ভাবনাময়।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com