জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সিলেটের বিয়ানীবাজারে চাচা ভাতিজার
মধ্যে দ্বন্ধ চরম আকার ধারন করেছে। জানা যায়, ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত
বিয়ানীবাজারের আজির মার্কেটের স্বত্বাধিকারী আজির উদ্দিন মারা যাওয়ার পর
তার তিনকে রেখে যান। তাদের মধ্যে আব্দুল জলিল, ফারুক উদ্দিন ও তাজ
উদ্দিন। পিতার জীবদশায় ১৯৮০ সালে ৯৬ শতক জমি ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে
বিক্রি করে করে দেন। বড় ভাই আব্দুল জলিল মারা যাওয়ার পর তার পুত্র আসাদ
আহমদ পিতার অংশের ভাগিদার হন। জায়গাটি এখনও তিন ভাইয়ের নামে রয়ে গেছে এবং
কোন ধরনের বন্টন নামা হয়নি। তাদের পজিশন অনুযায়ী তিনভাই ও তার
উত্তরাধিকারীগন সমহারে প্রাপ্য। আজির উদ্দিন জীবদ্দশায় আজির মার্কেট তৈরী
করে যান। সিলেট বারোইগ্রাম সড়কের পূর্ব দিকে প্রধান সড়কের রাস্তা ছিল। যা
পূর্ব ও পশিম দিকের অভ্যন্তরীণ রাস্তাটি বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ রোডের
৩৩ ফুট প্রশস্ত এবং ৩৫০ ফুট লম্বা ছিল। ১৯৬০ সাল থেকে ঐ রাস্তাটি সর্ব
জনসাধারণসহ বিয়ানী বাজার কলেজ, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার
শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া করে আসছে। আসাদ আহমদ ঐ পুরাতন রাস্তা ও দাদার
তৈরীকৃত ভবন ভেঙ্গে বিশাল আলিশান মার্কেট করার কার্যক্রম শুরু করে এবং
বিশাল রাস্তা বন্ধ করে মাত্র ৩-৪ ফুট রাস্তা রেখে পুরো রাস্তাটি আসাদ
আহমদ তার বেষ্টুনির মধ্যে নিয়ে যান এবং পুরো জায়গাতে স্থাপনা তৈরীর কাজও
শুরু করেন। আসাদ আহমেদ লিংক রোডটি বন্ধ করে পূর্বের ভবনটি ভেঙে প্রায় ১
বছর আগেই আজির মার্কেটের সংযোগ সড়কটি বন্ধ করায় বিপাকে পড়ে বাজারের
ক্রেতা,জনসাধারণ, শিক্ষার্থীসহ সুবিধাভোগীরা। তিনি রাস্তাগুলি বিবেচনা না
করে জোরপূর্বক আধুনিক মুটি স্টোরি বাজার নির্মাণের চেষ্টা করছেন।
বিষয়টি ফারুক উদ্দিনকে মারাত্মকভাবে পীড়া দেয়। আব্দুল জলিলের পুত্র আসাদ
আহমদকে বুঝানোর চেস্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় চাচা ফারুক উদ্দিন আদালতের
স্বরনাপন্না হন। আদালত আসাদ আহমদকে স্থিতাবস্থায় অমান্য করে ভবন
নির্মানের কাজ শুরু করে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে মার্কেট
তৈরীর কাজ চলছে। এ নিয়ে এলাকায় বহু বিচার শালিস হলেও তাদের মধ্যে আপোষ
নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে চাচা ফারুক উদ্দিন প্রথমে সিলেট
জেলা জজ আদালতে পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করে
প্রথমে ৮ সপ্তাহের স্থিতাবস্তা হাসিল করেন এবং ভাতিজা বাধ্য হয়ে নির্মান
কাজ বন্ধ রাখেন। পরবর্তীতে আবারও স্থিতাবস্থার মেয়াদ ৪ সপ্তাহের জন্য
বৃদ্ধি করে আদালত। বর্তমানে পূর্বের আদেশ বহাল থাকায় ভাতিজা আসাদ আহমদকে
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবন
নির্মানের কাজ চালু রেখেছেন। এ বিষয়ে চাচা ফারুক উদ্দিন মহামান্য
হাইকোটের নির্দেশনা অমান্য করায় ইতিমধ্যে ভুমি মন্ত্রনালয়ের সচিব, জেলা
প্রশাসক সিলেট , উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিয়ানীবাজার, অফিসার ইনচার্জ
বিয়ানীবাজার থানা পুলিশকে নোটিশ ইস্যু করান। নোটিশ পাওয়ার পরও প্রশাসনকে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাতিজা ভবন নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই
চাচা ভাতিজার মধ্যে জায়গা সংক্রান্তে বিরোধ চলে আসছে। ফারুক উদ্দিন উচ্চ
আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেই পুলিশ
প্রশাসনকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভাতিজা আসাদ আহমদ ভবন নির্মানের কাজ
চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা চাই চাচা ভাতিজার মধ্যে দ্বন্ধ অবসান ঘটিয়ে
শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করা হউক।
চাচা ফারুক উদ্দিনের উত্তরের অংশে খালি জায়গায় টিনের বাউন্ডারী দিয়ে
ভাতিজা আসাদ আহমদ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বহুতল ভবন নির্মানের
কাজ চালু রেখেছেন। তবে চাচা ফারুক উদ্দিন যুক্তরাজ্যে থাকায় চাচা ভাতিজার
মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা নেই। চাচা ফারুক উদ্দিনের অভিযোগ
ভাতিজা উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বাজারের সর্বসাধারনসহ
শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথ বন্ধ করে ভবন নির্মানের কাজ করেছেন। দ্রæততম
সময়ের মধ্যে নির্মান কাজ বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। এ
দিকে ভাতিজা আসাদ আহমদ জানান, আমি চাচার জায়গায় কোন ভবন নির্মান করছি না।
আদালতকে সম্মান দেখিয়েই আমি আমার জায়গায় ভবন নির্মান করছি। চাচা আমার
কাজে অযথা বাধার সৃষ্টি করছেন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আফরাফুজ্জামান জানান, চাচা ভাতিজার
মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমরা বিপদে আছি। কেউ কারো কথা শুনতে
চায় না। আর ভাতিজা আসাদ আহমদ তার পৈত্রিক স্থানে নির্মান কাজ চালিয়ে
যাচ্ছেন। মামলার বাদীকে বলেছি, উচ্চ আদালতের স্থিতিবস্থা বজায় রাখার
মেয়াদ বৃদ্ধির কাগজাত দেয়ার জন্য কিন্তু তিনি সঠিক সময়ে না দেয়ায় কোন
ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে
পুলিশ শর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করিনি।
ভাতিজা আসাদ আহমদ আরও জানান, এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। আমি চাইনা এটা
পত্র পত্রিকায় আসুক। চাচা ভাতিজার দ্বন্ধটা দেশবাশী জানুক। আমি আদালতের
নির্দেশ মান্য করেই নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহ অফিসার গোলাম মোস্তফা মুন্না
জানান, বিয়ানীবাজারে চাচা-ভাতিজার জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে উচ্চ
আদালতের কাগজপত্র পেয়েছি এবং বিয়ানীবাজার থানা পুলিশকে বাস্তবায়নের
নির্দেশনা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাক শের মাহবুব মুরাদ জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা
অবশ্যই পালন করতে হবে। কোন পক্ষ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আদালত
অবমাননার মামলা হবে। তিনিই দায়ী থাকবেন। বিষয়টি আমি আরও জেনে আপনাকে
অবহিত করতে পারব।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com