প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১৬, ২০২৫, ৪:৩৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৫, ২০২৫, ১১:৩০ এ.এম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এক কঠিন সময় পার করছে। চারদিকে ঘেরাও, মামলা, হামলা, বিভ্রান্তিমূলক প্রচার—তার মধ্যেও দলটি তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ত্যাগকে সামনে রেখেই আবার রাজপথে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সংকল্পে এগিয়ে যাচ্ছে।
সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৫ জুলাই) কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান' স্মরণে শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও বিশাল সমাবেশ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এবং 'আমরা জিয়া পরিবার'-এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মসূচি ছিল রাজনৈতিক ও আবেগঘন—দুটোরই অনন্য সংমিশ্রণ।
বক্তারা স্মরণ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিএনপির আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দল সমর্থিত গোষ্ঠীর হামলায় কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ হারান অনেক তরুণ।
কুড়িগ্রামের শহীদদের মধ্যে ছিলেন—রাশেদুল ইসলাম, কামাল আহম্মেদ বিপুল, আশীকুর রহমান, আসাদুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল তাহির, সৈকত, গোলাম রব্বানী, রায়হানুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম শফি ও নুর আলম।
তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই সমাবেশে এসে চোখের জল ফেলেছেন, স্মৃতিচারণ করেছেন, আর একটাই কথা বলেছেন—"আমার সন্তানের রক্ত যেন বিফলে না যায়।
সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কেবল স্মৃতিচারণ করেননি, দিয়েছেন সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ এক ভয়ংকর রাজনৈতিক চক্রান্তের মুখে। বিএনপি ও এর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কিছু তথাকথিত ইসলামি দলের সঙ্গে সরকারি দলের এক অদৃশ্য সমঝোতা চলছে।"
তার ভাষায়, “এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপি ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি এটিকে দুর্বলতা ভাবে, সে ভুল করবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।”
রিজভী সরাসরি হুঁশিয়ারি দেন—“আপনাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত আপনাদের জন্যই বুমেরাং হবে। জনগণের রায় আর রক্তের দামে এই দেশ ফের জাতীয়তাবাদের পথে ফিরবে।”
এই সমাবেশ শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না; এটি ছিল একটি আবেগময় ও বার্তাবহ আয়োজন। একদিকে শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান, অন্যদিকে আগামীর আন্দোলনের প্রস্তুতি—এই দুই স্তম্ভে ভর করেই আয়োজকদের বক্তব্য স্পষ্ট: বিএনপি এখন রাজপথেই ভবিষ্যৎ খুঁজছে।
সমাবেশ ঘিরে কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন। ঈদগাহ মাঠ উপচে আশপাশের এলাকা পরিণত হয় মিছিলে, শ্লোগানে ও আবেগে পরিপূর্ণ এক রাজনৈতিক চত্বরে।
অনেকে বলছেন, এটি ছিল বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এই ধরনের আয়োজন আরও বেশি হলে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়বে। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই চেতনা কতটা কার্যকর হবে জাতীয় রাজনীতিতে?
সমাবেশের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে এক শহীদ মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে উচ্চারিত কথাগুলো বারবার কানে বাজে—“আমার ছেলের মৃত্যু যদি একদিন এই দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে পারে, তবে সে মরেনি।”
এই সমাবেশ ছিল সেই প্রতিজ্ঞারই প্রকাশ—বিএনপি শহীদদের রক্তকে পাথেয় করে আবারও রাজপথে, আবারও সংগ্রামে, আবারও ‘জাতীয়তাবাদের সূর্যোদয়ের’ স্বপ্নে।