খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে চলাচলরত জনি বাসের (লোকাল) সহযোগীর হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একজন ছাত্রী। ভুক্তভোগী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী রাফসান আরা।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়ার চৌঁড়হাস বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
এতে ভুক্তভোগী হাত, কপাল, মাথা ও নাকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ৪টি রূপসা বাস আটক করে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী ক্যাম্পাসের উদ্দেশে বগুড়া থেকে বাসে এসে কুষ্টিয়ার চৌঁড়হাস থেকে জনি বাসে উঠেন। এসময় ভাড়া নিয়ে হেলপারের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে হেলপার ভুক্তভোগীর ফোন কেড়ে নিয়ে গালে থাপ্পড় মারে ও মাথায় ২-৩ টা ঘুসি ও ধাক্কা মেরে হাতে আঘাত করে। পরে ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ ও জোর করে ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মেয়েটার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে তার গালে থাপ্পড় মারছে। গায়ে হাত দিয়েছে। আশপাশে এত মানুষ থাকার পরও কেউ কথা বলছে না। আমি ওই মেয়েকে বলছি কেউ কথা না বললেও আমি তোমার বিষয়ে সবখানে বলব।
ভুক্তভোগী রাফসান আরা বলেন, পরীক্ষার জন্য আমি ক্যাম্পাসের উদ্দেশে বগুড়া থেকে আসছিলাম। চৌড়হাস থেকে আমি রূপসা বাসে উঠতে চাইছিলাম। তখন ওনারা আমাকে আরেকটা বাস (জনি) দেখিয়ে বলল এটাতে উঠেন। এটা দ্রুত যাবে। তখন হেলপারকে বললাম আমি যেটা বেসিক ভাড়া ২৫ টাকা ভাড়া দেব। তখন বাসে উঠার পর টাকা নেওয়ার সময় ৪০ টাকা রাখছে। তখন বললাম ভাড়াই তো ২৫ টাকা। তখন হেলপার আমাকে বলল ‘কোথাকার অশিক্ষিত মেয়ে তুমি, আমি শেখপাড়ায় থাকি ভাড়া কত এটা আমরা জানি না? নাটক শুরু করছ।’ তখন আমি আমার স্বামীকে ফোন দিতে গেলে ফোন কেড়ে নিয়ে গায়ে আঘাত করছে। আমার মুখে ২-৩টা ঘুসি মারছে। আমি যখন প্রতিবাদ করতে ছিলাম একটা লোকও আমার সাপোর্টে কথা বলছিল না।
একটা মহিলা বেরিয়ে বলল সব দোষ ওই লোকের। কেউ কোনো কথা শুনছিল না। আমার বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করতে ছিল। এমনকি আমার ভিডিও ধারণ করে ওরা আমাকে জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. খুরশিদা জাহান বলেন, ওনার হাতে, কপালে, মাথায় আর নাকে আঘাত পেয়েছে। গুরুতর তেমন কিছু হয়নি, রক্তপাত হয়নি। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি ও পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছি। এরপর কোনো প্রয়োজন হলে আসতে বলেছি।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ঘটনায় জড়িত বাস সহযোগীর শাস্তি নিশ্চিত করা, ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ক্যাম্পাস থেকে জনি বাস বাতিল ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রুট পারমিট বাতিল করা।
লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জুলফিকার হোসেন শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা যেভাবে চাও সেভাবেই হবে। এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা মারধর ও হেনস্তা করেছে তাদের বিচার ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, আমরা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটা বাস আটক করেছে। বাসগুলো ক্যাম্পাসে নিরাপদে রাখা হয়েছে। মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জনি পরিবহনের বাস মালিক আনিস মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর থেকে বিষয়টি অবগত হয়েছি। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমি বাস মালিক সমিতিকে অবগত করেছি। তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, মালিক সমিতি ও বাস মালিকের সাথে কথা হয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি পাঠাবে। তারপর সবাই বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com