প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১৮, ২০২৫, ৮:০৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৮, ২০২৫, ১:১৫ এ.এম

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে প্রতিদিন নির্ধারিত সময় থেকে এক ঘণ্টা দেড়ি করে স্কুল শিক্ষকদের নৌকা স্কুলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে নৌকা ঘাটের এক মাঝি শিক্ষকদের প্রশ্ন করলে শেখর রায় নামে এক শিক্ষক মাঝির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মামলা করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক তাহিরপুর উপজেলার নোয়ানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (১৭জুলাই) সকাল ১০টায় তাহিরপুর বাজার নৌকা ঘাটে এমন ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ঘাটের লোকজন, দোকানী ও মাঝিরা একজন শিক্ষকের এমন আচরণ ও মুখের ভাষা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী মাঝি আলী হোসেনসহ ঘাটে উপস্থিত দোকানী ও মাঝিরা জানায়, তাহিরপুর উপজেলা সদরের নৌকা ঘাট থেকে প্রতিদিন ৮-১০জন শিক্ষক একটি নৌকা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি বিদ্যালয়ে যায়। সকাল ৯টায় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময় শুরু হলেও এই শিক্ষকদের নৌকা প্রতিদিন ১০টা পর্যন্ত বাজার ঘাটে অবস্থান করতে দেখা যায়। তাহিরপুর বাজার থেকে দক্ষিণ শ্রীপুরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নৌকায় পৌঁছাতে সময় লাগে অন্তত ১ঘন্টা। আবার বিকাল ৪টা ১৫পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনার কথা থাকলেও বিকাল ৪টার আগেই তাদের নিয়ে নৌকা ঘাটে ফিরে আসে।
প্রতিদিন শিক্ষকদের দেড়ি করে স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি ঘাটের মাঝিদের নজরে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বাজারের ঘাটে শিক্ষক সহ নৌকা দেখে সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের আলী হোসেন নামে এক মাঝি শিক্ষকদের নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করেন, এই ঘাটেই যদি মাস্টাররা ১১টা বাজায় তাহলে স্কুলে ক্লাস করবেন কখন? তখন উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের নোয়ানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখর রায় প্রশ্নকারী মাঝির উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং অশ্লীল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও মাঝিকে ধরতে আসে। এমনকি ফিরে এসে মাঝির নামে মামলা করার হুমকি দেন।
নৌকায় শেখর রায় সহ যে শিক্ষকরা স্কুলে যান তারা হলেন, মাড়ালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর আহমদ, এরশাদ, প্রধান শিক্ষক আবুল ফজল, সাহেবনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্চয় কুমার দে, সহকারী শিক্ষক রাহেতা বেগম, সুলেমান মিয়াআসহ ৮-১০জন।
এঘটনায় ঘাটের মাঝি ও ব্যবসায়ীরা শেখর মাস্টারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই পোস্ট করেন। ফেসবুক পোস্টে অনেকেই শেখর মাস্টার কে নেশাখোর ও নিয়মিত স্কুলে যান না বলে কমেন্টস করেন। ফেসবুক কমেন্টসে ঘাটের ব্যবসায়ী আজিমুল ইসলাম লিখেন, নৌকা ঘাটের সবাই তার (শেখর) নুংড়া ভাষায় গালাগালি শুনেছে, আমি প্রতিদিনেই দেখি তাদের নৌকা ১০:৩০ অথবা তার পরেও যেতে। সে একজন স্কুল শিক্ষক হয়ে যদি বাজে ভাষা ব্যবহার করে তাহলে, তার প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্টদের কি ভাষা (ব্যবহার) শিক্ষা দিবে তা আমাদের বুঝার বাকি নাই....এমন একজন গাজা খুর শিক্ষক হয় কিভাবে?
তার বিরুদ্ধে কঠিন প্রদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
রতনশ্রী গ্রামের আলী সাইদ লিখেন, এই হালা শিক্ষক নামে কলঙ্ক। এই শেখর মাষ্টার সারাদিন রাত নেশাগ্রস্ত অবস্হায় থাকে। শেখরকে শিক্ষকতা থেকে বাতিল করা উচিৎ। সে এলাকার সবার সাথেও খারাপ আচরণ করে এবং কটুর ভাষায় সবার সাথে কথা বলে। এরে একদিন বানা দিলে ঠিক হয়ে যাবে। তার ভাব দেখলে বুঝা যায় যে সে প্রেসিডেন্ট সালা মাদারবোর্ড।
বাজারের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন ও সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম লিখেন, শেখর মাস্টার একজন নেশাখোর।
তাহিরপুর সদর ক্লাস্টারের একজন শিক্ষক বলেন, আমরা যখন স্কুলে ক্লাস নেই তখন শেখর রায়কে আমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে হাটাচলা করতে দেখা যায়। তিনি স্কুল করেন কখন।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের নোয়ানগর গ্রামের এক অভিভাবক সদস্য কাদির মিয়া সহ কয়েকজন বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসতে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা বাজে। প্রায় সময়ই তিনি স্কুলে আসেননা।
নৌকায় থাকা মাড়ালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুর আহমদ বলেন, আমরা যখন ঘাটে ছিলাম তখন সাড়ে ৯টা বাজে। আজকে আবহাওয়া খারাপ থাকায় কিছুটা দেড়ি হয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শেখর রায় বলেন, আমি নৌকায় উঠা মাত্রই এক মাঝি আমাদের 'মাষ্টর' বলে সম্মোধন করে অপমান করে কথা বলায় আমার রাগ হয়। পরে তাকে জিজ্ঞেস করি আমরা দেড়িতে গেলে সে প্রশ্ন করার কে?
শেখর রায়কে প্রশ্ন করা হয়, আপনাকে মাষ্টর না বলে কি বলা উচিত ছিলো? তাছাড়া মাষ্টর সম্মোধন করে ডাকা কি অপরাধ? তিনি বলেন সে আরোও সুন্দর ভাবে "স্যার" বলে সম্মোধন করতে পারতো।
এবিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সোলেমান মিয়া বলেন, কোন শিক্ষক মাঝির সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারেন না। সকল শিক্ষককে যেকোন ভাবে নির্ধারিত সময় সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। কেউ দেড়িতে গেলে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোহন লাল বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।