
মো: তানভীর (৮)। ফুটফুটে মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র। জ্বর নিয়ে এসে ভুল চিকিৎসার শিকার। বোরহানউদ্দিনের উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) শফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। যার কারণে হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ওই শিশুর মা মিতু বেগম স্যাকমোর বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) সংশ্লিষ্ট স্যাকমোকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ এবং তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। পঙ্গু হওয়া তানভীর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ফুলকাচিয়া ৬নং ওয়ার্ডের মোসলেম এর সন্তান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোরহানউদ্দিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান। তানভীরের বাবা মো: মোছলেম, মা মিতু ও এজহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাতে তারভীর জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আকিব মেডিকেল হলের মালিক দালাল আকিবের সাথে দেখা হয়। ভালো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাঁর ফার্মেসিতে নিয়ে যান। আকিব, স্যাকমো শফিকুলকে দেখান। সফিক টেষ্ট লিখে দেন। টেষ্টের জন্য আকিব তাদেরকে নিয়ে যান “আহসানিয়া ডায়াগনস্টিক”-এ। টেস্ট শেষে রিপোর্ট দেখে শফিকুল ইসলাম জানায়, ছেলের ডেঙ্গু হয়েছে। সফিক তাকে এন্টিবায়টিক দিতে বলেন। এরপর আকিব ৪টি ইনজেকশন পুশ করেন। সাথে সাথে তানভীরের শারিরীক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বিষয়টি শফিকুল ইসলামকে জানায়। তিনি এলার্জির সমস্যার কথা বলেন। ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতাল এরপর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ, পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। মিতু বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদে উদ্ধৃতি দিলে বলেন, বোরহানউদ্দিনে ভুল চিকিৎসার কারণে তার সন্তানের এ অবস্থা। চলতি মাসের (১৫ জুলাই) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তানভীরের দুটি হাঁতের কবজি ও একটি পাঁ কেটে ফেলা হয়েছে। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শফিকুল ইসলাম বোরহানউদ্দিনের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে স্যাকমো হিসেবে কর্মরত। এছাড়া হাসপাতাল সড়কে আকিব মেডিকেল হল ও দেউলা মেডিকেল হল নামে ২টি ঔষধ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ব্যক্তিগত চেম্বার করেন। এ ঘটনায় ওই শিশুর মা মিতু বেগম স্যাকমো শফিকের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পেনাল কোড ৩২৬, ৪১৯, ৪০৬, ৫০৬(২) ধারা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২৮/২৯ ধারায় মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) সংশ্লিষ্ট স্যাকমোকে গ্রেফতার করার পর তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। স্যাকমো শফিকুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে তানভীর নামে রোগিকে নিয়ে তার স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করতেছিলো। কেউ তাকে চিকিৎসা দেয়নি। পরে তাকে আমি দেখেছি। তার সারা গায়ে এলার্জি, ক্রাশ, ফোড়ার মতো এবং প্রচন্ড জ্বর ও খিচুনি ছিলো। আমি তাকে জ্বরের সিরাপ, জ্বরের সাপোজিটর ও খিচুনি কমার জন্য সেডিল ইঞ্জেকশন হাপ এম্পুল দিয়েছি। যাতে তাঁর খিচুনি না হয়। আমি তাকে শুধু জ্বরের ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। আপনার ব্যবস্থাপত্রে ডেঙ্গু লিখছেন এবং এন্টিবায়োটিক লিখছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি নীরব থাকেন, এ সময় কোন উত্তর দিতে পারেন নি। তানভীরের বাবার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোনো ভুল চিকিৎসা দেননি বরে জানান তিনি। বোরহানউদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. কে. এম. রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে কর্মরত স্যাকমো শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তানভীরের বাবা একটি অভিযোগ করেছেন। তারা বাচ্চাটিকে একটি সেফট্রিয়াক্সোন এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে। যতটুকু কাগজপত্র দেখেছি তাতে সন্দেহ করা যায় হয়তোবা সেফট্রিয়াক্সোন দেয়ার ফলে ড্রাগ রিঅ্যাকশন হয়েছে। আমি যতটুকু জানি বাচ্চাটা মুমূর্ষ অবস্থায় আছে। সুস্থতা কামনা করছি। বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ছিদ্দিকুর রহমান জানান, অভিযুক্ত স্যাকমো সফিকুল ইসলামকে শনিবার (১৯ জুলাই) গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা: মনিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) শফিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত চেম্বারে তিনি রোগী দেখেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মামলা করেছেন এবং তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। শফিক যদি জেল হাজতে যায় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠাবো। জেলে গেলে অবশ্যই তিনি সাসপেন্ড হবেন। একজন উপসহকারী হয়ে নামের পাশে ডাক্তার লিখতে পারেন কি না জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, ছোট-খাটো চিকিৎসা বা পরামর্শ তিনি দিতে পারেন, তবে কোন ভাবেই নিজেকে ডাক্তার লিখতে পারেন না এবং বড় ধরনের কোন চিকিৎসা দিতে পারে না।