প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ১৯, ২০২৫, ৪:১৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ২৪, ২০২৫, ৮:৪২ পি.এম
জামালপুর জনস্বাস্থ্যের কোটিপতি অফিস সহকারী বাবুর দূর্নীতি সমাচার

বলা বাহুল্য, জামালপুর জনস্বাস্থ্যের কোটিপতি অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর কবির বাবুর দূর্নীতি যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
প্রভাবশালী এই অফিস সহকারী জামালপুর শহরের বোসপাড়াস্থ জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসায় বসবাস করে থাকেন।
শেখ হাসিনার আমলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গোপালগঞ্জের পরই বেশি বরাদ্দ আসে জামালপুরে। হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও শতশত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানে।
অনেক ঠিকাদার শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন আবার অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। এখানে, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ব্যবহৃত হয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে, সরকারি অর্থের ব্যাপক তছরুপ হয়েছে এখানে, সরকারি বিধিভঙ্গই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয় অত্যন্ত সুকৌশলে এখানেই হরণ করা হয়েছে অনেক নারীর সম্ভ্রম। আর ছাপোষা অফিস সহকারী থেকে জাহাঙ্গীর কবির বাবুসহ অর্ধশত কোটিপতি বনে গেছেন এ অফিসের অপকর্মে জড়িত থেকেই। অনিয়ম-দুর্নীতির সজ্ঞায় যা যা পড়ে তার প্রায় সবকিছুই ঘটেছে এ প্রতিষ্ঠানটিতে। তাতে রাজনৈতিক শেল্টার দিতেন পলাতক শাসক দলীয় নেতা ও ক্যাডাররা।
জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের গাড়ি চালক ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির বাবুর বাবা আব্দুল হালিম। তাই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা অধিদফতরের কোয়ার্টারেই। কোটার জামানায় বাবার কোটায় অফিস সহকারীর চারকিটাও পেয়েছে সে। চাকরি শুরু ২০১৫ সালের ১মার্চে। সময়ের বিবর্তনে সে এখন এ অফিসের প্রধান অফিস সহকারী। ১৩তম গ্রেডের কর্মচারী হলেও এ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সবাই জানে এবং মানে সে-ই ‘ছায়া নির্বাহী প্রকৌশলী’। কারণ এ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের আলো-অন্ধকারের সকল কর্মের রাজসাক্ষী এই বাবু। কখনো ঘটনার সহযোগি, কখনো অঘটনের উপাদান সরবরাহকারী আবার কখনো দুয়েমিলে করেছেন কু-কর্মগুলো। ফলে বাবুর কব্জাতেই অফিসের প্রধান কর্তা ব্যক্তিটি। বদৌলতে বাস করছেন বড় স্যারের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়িতে, মাছ চাষ করছেন সরকারি পুকুরে। কর্মস্থল আর নিয়ন্ত্রণ অফিসে প্রায় একযুগ থাকায় আধিপত্যটাও গড়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্যভাবে। সব মিলিয়ে হাজারের অঙ্কে বেতন পাওয়া ছাপোষা ড্রাইভারের ছেলে এখন অবলীলায় কোটিপতি বনে গেছেন। নাম জাহাঙ্গীর কবির বাবু। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরোদেহ সাদা হওয়ায় তাকে অনেকেই চিনেন ‘সাদা বাবু’ নামে। আবার কেউ ডাকেন ‘হোয়াইট বাবু’ বলে।
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বাবু ওরফে সাদাবাবু দুর্নীতি, অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ, তদবির ও পার্টনারে ঠিকাদারিসহ নানা অপকর্ম করে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক। দুদকের জাল ভেদ করতে নামে বেনামে জমি, বাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিপুল অর্থ সম্পদ গড়ে তুলছেন তিনি। তার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের হিসাব বেশকটি ব্যাংকে খতিয়ে দেখলেই প্রমাণ মিলবে দাবী সংশ্লিষ্টদের।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি কর্মচারি হয়েও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল সে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারহান আহমেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু পরিচয়ে বিশাল প্রভাবে ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণ, অনিয়ম, দুর্নীতির কাজে বিশ্বস্ত সহযোগিতা আর বিশেষ চাহিদার বস্তু সাপ্লাই দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদেরও প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে সে। একারণে জনস্বাস্থ্য অফিসে একক আধিপত্য বিস্তার করে সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনপ্রকৌশলের প্রধান সহকারী জাহাঙ্গীর কবির বাবু ওরফে সাদা বাবু ওরফে হোয়াইট বাবুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খন্ডচিত্র।
ঠিকাদার, অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারির দেয়া তথ্যমতে, নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদের অনিয়ম ও দুর্নীতির মেশিন হল অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর কবির হোয়াইট বাবু । তার ইশারা ছাড়া জনস্বাস্থ্যের অফিস আঙ্গিনায় একটি কর্মও সাধিত হয়না। তার আঙ্গুলের হেলনিতে চলে জনস্বাস্থ্যের অফিসিয়াল কার্যক্রম। ঠিকাদারী কাজ বন্টন, পার্সেন্টেজ ঠিক করা, টেন্ডার ও কাজ বরাদ্দের মত ঠিকাদারদের ভাগ্য নির্ধারিত হয় অফিস সহকারী বাবুর হাত ধরেই। যে কারণে নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস রুমের চেয়ে বাবুর টেবিলের চারপাশ জুড়ে বসে থাকে ঠিকাদাররা।
বিজ্ঞপ্তিবিহীন কাজটি কতো পার্সেন্ট কমিশনে কাকে দিবে, কার কাছে কাজ বিক্রি করবেন ঠিকাদার, ঠিকাদারি নয়া লাইসেন্স করা, নবায়ন, বাতিল, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থীর তালিকা তৈরি নানা কাজের সুলতানি দায়িত্ব সম্পন্ন হয় হোয়াইট বাবুর কলমের খোঁচায়। তার কলমের প্রতি খোঁচার রেট হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত। (চলবে)
Editor and Publisher : Ariful Islam
Address: Nikunja-2, Road No. 1/A Cemetery Road, Dhaka
Call: 8809639113691
E-mail: Ajkerkhobur@gmail.com
@2025 | Ajker-Khobor.com