সরকারি চাকরির ন্যূনতম পদ পিয়ন। কিন্তু জীবনযাপন যেন কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার চেয়েও বিলাসবহুল! কথাটি শুনে অবাক হলেও বাস্তবে এমনই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিয়ন মাহবুব আলম সুমন প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি বনে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই পিয়ন নিজেকে ‘উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ’ পরিচয়ে  প্রতারণা করে যাচ্ছেন পিয়ন মাহবুব আলম সুমন।

এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়েছে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

দাবি করা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যেক দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। তবে এই অর্থ পেতে হলে ‘ফরম জমা’ বাবদ দিতে হবে ছয় হাজার টাকা!

শতাধিক ব্যাক্তির কাছ থেকে জনপ্রতি ছয় হাজার টাকা করে এরই মধ্যে হাতিয়ে নিয়ে পাঠিয়েছেন একটি করে এসএমস। সেখানে লেখা- আপনার একাউন্টে টাকা জমা হয়েছে। খোঁজ  নিয়ে জানা গেল ওই ব্যাংকে কারো নামে কোন একাউন্টই নেই।

যে মোবাইল নম্বর দিয়ে মেসেজ দেওয়া হয়েছে সেটাও তাদের ব্যাংকের কোন ব্যক্তির নয়। এভাবে পিয়ন মাহবুব আলম সুমন একটি ইউনিয়ন থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা।

এতো গেল নগদ অনুদানের বিষয়। সব দপ্তরই তার হাতের মুঠোয় দাবী করে পাঁচ লাখ টাকার সরকারি ঘর পাইয়ে দিবে বলে জনপ্রতি নিয়েছেন আরও দেড় লাখ টাকা করে।  দুধ দেওয়া গাভী দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন জনপ্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা, বাদ যায়নি মাতৃকালিন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, খাদ্য ভাতার।

নানাবিধ ভাতার পশরা সাজিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন জনপ্রতি পচিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা। কয়েকজনকে অবশ্য নিজের পকেট থেকেই দিয়েছেন কিছু নগদ অনুদান। আর এতেই তার প্রতারণার ফাঁদে পড়েন ভুক্তভোগীরা, খুইয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

পিয়ন মাহবুব আলম সুমন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েও দিব্যি অফিস করছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কার্যত কিছু হচ্ছে না।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, ওই পিয়ন বদলী হওয়ার জন্য জোর তদবীর চালাচ্ছে। সে আসলে একটা প্রতারক। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যপারে সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের দাবি জানিয়ে সচেতন মহল বলছে, নাম ভাঙানো, প্রভাব খাটানো ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এখনই কঠোর অবস্থানে যেতে হবে।