০৬:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদক নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বনানী থানা পুলিশ

  • Riyad Ahmed Ornob
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • 87
রাজধানীর বনানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পুরোপুরি ব্যর্থ। মাদক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণ। অলিতে-গলিতে হাত বাড়ালেই মিলছে সর্বনাশা মাদক। মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে যুবসমাজের মাঝে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। এসব অভিযোগ এসেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বনানী থানার বর্তমান ওসি মো. রাসেল সারোয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে নেই কোনো অভিযান এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। পুলিশের সোর্সদের যোগসাজশেই পরিচালিত হচ্ছে মাদক ব্যবসা। এছাড়া কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর শীর্ষে রয়েছে বনানী থানা।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বনানীর কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে যাদের সাথে পুলিশের সোর্সদের যোগসাজশ রয়েছে ও পুলিশের সখ্যতাও রয়েছে। যে কারণে তারা প্রভাব বিস্তার করে প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করছে। বিস্তারিত তুলে ধরা হলো প্রতিবেদনে।
মহাখালী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি শরীফ উরফে পাগলা শরীফ দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ফের ইয়াবা কারবার শুরু করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এর পিছনের দিকে শাকেরিয়া মাদ্রাসা গলিতে শরীফের নিজ বাড়িতে প্রতিদিন বসছে ইয়াবা সেবনের আসর। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় নামধারী সন্ত্রাসী শরীফের মূল পেশা ছিল চাঁদাবাজি। অবৈধ অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করতেন। এছাড়া চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত ছিল। শরীফের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকবছর ধরে ইয়াবা কারবারি হিসেবে মহাখালীতে আলোচিত শরীফের নাম। আগে মহাখালী রাজউক অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবন ছিল তার মাদক বিক্রির স্পট। সেখানে ইয়াবা ও গাঁজার কারবার চালাতেন। সেই মাদক স্পটটি সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসের পাশে হওয়ায় একসময় ছাত্ররা জানতে পেরে দলবেঁধে সেখানে গিয়ে মাদক স্পটটি গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু শরীফ আগে থেকে টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে সে তার নিজের বাড়িতে মাদক কারবার শুরু করে। সেখান থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও বন্ধ হয়নি তার ইয়াবা কারবার। জানা গেছে বর্তমানে বনানী থানা পুলিশের সোর্স শহীদের যোগসাজশে শরীফের ইয়াবা কারবার চলে।
এদিকে শরীফের আরেক সহযোগী বেলতলা বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাগর (২৮) ও তার মা (৫৫)। থানায় নিয়মিত ভাতা দিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাগরের মা ঘরে বসে মাদক ব্যবসা করলেও সাগর ফোন করলে গাঁজা হোম ডেলিভারি করে এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। তিনি শরীফের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে বিক্রি করে। একটি সূত্র জানায়, সাগরকে বনানী থানার একটি টিম মাদকসহ আটকের পর তিনি হ্যান্ডকাফ সহ পালিয়ে গিয়েছিল। তাকেও এখন সোর্স শহীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায়।
মহাখালী হাজারিবাড়ী এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী আবির (২৭)। সন্ত্রাসী ডিবির সোর্স টুন্ডা ইউসুফের ছোট ভাই সে। তারা দুই ভাই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘদিন যাবত দুই ভাইয়ের ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা চলছে।
ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা করছে কাশেম। তিনিও পুলিশের সোর্স। ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশে বুলু নামের এক ব্যাক্তির বাড়িতে গাড়ি চালকের পেশায় কাজ করলেও এর আড়ালে করেন অবাধ ইয়াবা ব্যবসা।
বেলতলা এলাকায় অপু নামক এক ব্যক্তির ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ এসেছে। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসায় তার নাকি অবাধ বিচরণ। তাকে সোর্স শহীদের মোটরসাইকেল চালিয়ে ইয়াবা ডেলিভারি করতে দেখা যায়। অপু একজন নব্য বিএনপি নেতা।
বনানীতে মাদক ব্যবসায় জড়িত আরও যাদের নাম অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে- ইয়াছিন আলাউদ্দিন, বাবলু, রুবেল, মফিজ, কুদ্দুছ, রিপন, শাহীন, ফর্মা হারুন। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা অচিরেই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে বনানীকে মাদক মুক্ত করা হবে।
এদিকে মানবপাচার অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ারের বিরুদ্ধে আইজিপিকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মাদক নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বনানী থানা পুলিশ

মাদক নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বনানী থানা পুলিশ

পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:৪৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীর বনানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পুরোপুরি ব্যর্থ। মাদক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণ। অলিতে-গলিতে হাত বাড়ালেই মিলছে সর্বনাশা মাদক। মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে যুবসমাজের মাঝে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। এসব অভিযোগ এসেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, বনানী থানার বর্তমান ওসি মো. রাসেল সারোয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে নেই কোনো অভিযান এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। পুলিশের সোর্সদের যোগসাজশেই পরিচালিত হচ্ছে মাদক ব্যবসা। এছাড়া কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর শীর্ষে রয়েছে বনানী থানা।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বনানীর কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে যাদের সাথে পুলিশের সোর্সদের যোগসাজশ রয়েছে ও পুলিশের সখ্যতাও রয়েছে। যে কারণে তারা প্রভাব বিস্তার করে প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করছে। বিস্তারিত তুলে ধরা হলো প্রতিবেদনে।
মহাখালী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি শরীফ উরফে পাগলা শরীফ দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ফের ইয়াবা কারবার শুরু করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এর পিছনের দিকে শাকেরিয়া মাদ্রাসা গলিতে শরীফের নিজ বাড়িতে প্রতিদিন বসছে ইয়াবা সেবনের আসর। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একসময় নামধারী সন্ত্রাসী শরীফের মূল পেশা ছিল চাঁদাবাজি। অবৈধ অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করতেন। এছাড়া চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সাথেও জড়িত ছিল। শরীফের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকবছর ধরে ইয়াবা কারবারি হিসেবে মহাখালীতে আলোচিত শরীফের নাম। আগে মহাখালী রাজউক অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবন ছিল তার মাদক বিক্রির স্পট। সেখানে ইয়াবা ও গাঁজার কারবার চালাতেন। সেই মাদক স্পটটি সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসের পাশে হওয়ায় একসময় ছাত্ররা জানতে পেরে দলবেঁধে সেখানে গিয়ে মাদক স্পটটি গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু শরীফ আগে থেকে টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে সে তার নিজের বাড়িতে মাদক কারবার শুরু করে। সেখান থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও বন্ধ হয়নি তার ইয়াবা কারবার। জানা গেছে বর্তমানে বনানী থানা পুলিশের সোর্স শহীদের যোগসাজশে শরীফের ইয়াবা কারবার চলে।
এদিকে শরীফের আরেক সহযোগী বেলতলা বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সাগর (২৮) ও তার মা (৫৫)। থানায় নিয়মিত ভাতা দিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাগরের মা ঘরে বসে মাদক ব্যবসা করলেও সাগর ফোন করলে গাঁজা হোম ডেলিভারি করে এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। তিনি শরীফের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে বিক্রি করে। একটি সূত্র জানায়, সাগরকে বনানী থানার একটি টিম মাদকসহ আটকের পর তিনি হ্যান্ডকাফ সহ পালিয়ে গিয়েছিল। তাকেও এখন সোর্স শহীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায়।
মহাখালী হাজারিবাড়ী এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী আবির (২৭)। সন্ত্রাসী ডিবির সোর্স টুন্ডা ইউসুফের ছোট ভাই সে। তারা দুই ভাই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘদিন যাবত দুই ভাইয়ের ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা চলছে।
ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা করছে কাশেম। তিনিও পুলিশের সোর্স। ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশে বুলু নামের এক ব্যাক্তির বাড়িতে গাড়ি চালকের পেশায় কাজ করলেও এর আড়ালে করেন অবাধ ইয়াবা ব্যবসা।
বেলতলা এলাকায় অপু নামক এক ব্যক্তির ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ এসেছে। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসায় তার নাকি অবাধ বিচরণ। তাকে সোর্স শহীদের মোটরসাইকেল চালিয়ে ইয়াবা ডেলিভারি করতে দেখা যায়। অপু একজন নব্য বিএনপি নেতা।
বনানীতে মাদক ব্যবসায় জড়িত আরও যাদের নাম অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে- ইয়াছিন আলাউদ্দিন, বাবলু, রুবেল, মফিজ, কুদ্দুছ, রিপন, শাহীন, ফর্মা হারুন। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা অচিরেই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করে বনানীকে মাদক মুক্ত করা হবে।
এদিকে মানবপাচার অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ারের বিরুদ্ধে আইজিপিকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন।