০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাতার কার্ড বন্ধ করে দেওয়ায় ভিক্ষায় নামতে বাধ্য হয় কবি জসীমউদ্দীনের আসমানী কবিতার আসমানীর প্রতিবন্ধী ছেলে আশরাফুল

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও,/ বাড়িতো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি।’
পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের বিখ্যাত কবিতা আসমানী যেন শুধু সাহিত্যের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়—বরং তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায় আজও, ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের কোনো কোনো ঘরে। তেমনই এক বাস্তব চরিত্র আসমানীর ছেলে আশরাফুল।

ঢাকা থেকে ফেরার পথে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ  এক মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ডান হাত ভেঙে যায় আশরাফুলের। সময়মতো অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় হাতটি চিরতরে অচল হয়ে পড়ে। এক সময়কার কর্মক্ষম এই মানুষটি বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে নামেন। ঈশান গোপালপুরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশরাফুলকে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ একবার পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বদলের পর সেই ভাতাও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নতুন চেয়ারম্যান এই ভাতা নবায়ন করেননি। ফলে হতাশা ও দুঃখ নিয়ে দিন গুনছেন আশরাফুল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, “এই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ভাতা পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করব।”

আসমানীর জীবনও ছিল কষ্টের প্রতিচ্ছবি। তার জন্ম ১৯১৩ সালে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে। বাবা ছিলেন আরমান মল্লিক। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় রহিমদ্দির সঙ্গে। দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটে ২০১২ সালে, ৯৯ বছর বয়সে, রেখে যান দুই ছেলে ও চার মেয়ে।

কবিতার পাতার আসমানীর জীবন যেখানে এক নিদারুণ দারিদ্র্য ও অবহেলার প্রতীক, বাস্তব জীবনের আসমানীর পরিবার আজও যেন সেই করুণ অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি করছে।

এই পরিবারটির সহায়তায় প্রশাসন ও সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসাই এখন সময়ের দাবি।
আসমানীর জীবন কাহিনী যেমন কবিতায় স্থান পেয়েছিল, তেমনি তাঁর উত্তরসূরির জীবনের এই করুণ চিত্র যেন বাস্তবতার এক নির্মম প্রতিফলন। সমাজ ও প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি এ ধরনের মানুষের পাশে দাঁড়ালেই কবি জসীমউদ্দীনের  আসমানীর কবিতার উত্তরসূরিরা একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারবে

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মোংলায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কমিটি পরিচিতি সভা

ভাতার কার্ড বন্ধ করে দেওয়ায় ভিক্ষায় নামতে বাধ্য হয় কবি জসীমউদ্দীনের আসমানী কবিতার আসমানীর প্রতিবন্ধী ছেলে আশরাফুল

পোস্ট হয়েছেঃ ১২:২৫:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও,/ বাড়িতো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি।’
পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের বিখ্যাত কবিতা আসমানী যেন শুধু সাহিত্যের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়—বরং তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায় আজও, ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের কোনো কোনো ঘরে। তেমনই এক বাস্তব চরিত্র আসমানীর ছেলে আশরাফুল।

ঢাকা থেকে ফেরার পথে রাজবাড়ী গোয়ালন্দ  এক মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ডান হাত ভেঙে যায় আশরাফুলের। সময়মতো অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় হাতটি চিরতরে অচল হয়ে পড়ে। এক সময়কার কর্মক্ষম এই মানুষটি বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে ভিক্ষা করতে নামেন। ঈশান গোপালপুরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশরাফুলকে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান চৌধুরী পংকজ একবার পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বদলের পর সেই ভাতাও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নতুন চেয়ারম্যান এই ভাতা নবায়ন করেননি। ফলে হতাশা ও দুঃখ নিয়ে দিন গুনছেন আশরাফুল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, “এই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমরা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ভাতা পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করব।”

আসমানীর জীবনও ছিল কষ্টের প্রতিচ্ছবি। তার জন্ম ১৯১৩ সালে ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে। বাবা ছিলেন আরমান মল্লিক। অল্প বয়সেই তার বিয়ে হয় রহিমদ্দির সঙ্গে। দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের জননী ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটে ২০১২ সালে, ৯৯ বছর বয়সে, রেখে যান দুই ছেলে ও চার মেয়ে।

কবিতার পাতার আসমানীর জীবন যেখানে এক নিদারুণ দারিদ্র্য ও অবহেলার প্রতীক, বাস্তব জীবনের আসমানীর পরিবার আজও যেন সেই করুণ অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি করছে।

এই পরিবারটির সহায়তায় প্রশাসন ও সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসাই এখন সময়ের দাবি।
আসমানীর জীবন কাহিনী যেমন কবিতায় স্থান পেয়েছিল, তেমনি তাঁর উত্তরসূরির জীবনের এই করুণ চিত্র যেন বাস্তবতার এক নির্মম প্রতিফলন। সমাজ ও প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি এ ধরনের মানুষের পাশে দাঁড়ালেই কবি জসীমউদ্দীনের  আসমানীর কবিতার উত্তরসূরিরা একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারবে