
চট্টগ্রামের পটিয়ায় গ্রাহকের ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও মাতৃভান্ডার মাতৃকল্যান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি: (রেজি. নং-১০৫১৮) এর ম্যানেজার শংকর কান্তি দে (৪৭)। সে পটিয়া পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড সুচক্রদন্ডী গ্রামের মাষ্টার বেকারির মালিক হরিপদ দে বাড়ির মৃত বাদল দের পুত্র।
জানা যায়,সমবায় অধিদপ্তর থেকে ২০১০ সালে সমবায় সমিতি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আইন ও বিধির তোয়াক্কা না করে সঞ্চয় আমানত ও স্থায়ী আমানত গ্রহণ এবং ঋণ বিতরন কার্যক্রম শুরু করেন মাতৃকল্যান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি: নামের এই সমিতি। সমবায় অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোন তদারকি না করায় এসব অনিয়মের সুযোগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সচেতন মহল। শংকর কান্তি দে এই সমিতির একজন পরিচালক। মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে সমিতিতে ম্যানেজার হিসেবেও চাকরি করতেন তিনি। নন জুডিশিয়াল স্টাম্প অথবা সমিতির নামে প্যাড তৈরি করে শংকর দে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে চুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে স্থায়ী আমানত ও সঞ্চয় আমানত নামে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করেছেন। সে গরীব অসহায় মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। গত প্রায় তিন মাস থেকে গ্রাহকরা তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা । প্রতারণার শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা।
জানা যায়, দক্ষিণ ভূর্ষি গ্রামের আবদুল রাজ্জাকের স্ত্রী চেমন আরা বেগম থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা,একই এলাকার ওসমান গনির স্ত্রী রীনা আক্তার চৌধুরী থেকে এক লক্ষ টাকা, মৃত আবদুর সত্তারের ছেলে নুরুল কবির থেকে দেড় লক্ষ টাকা, দোহাজারী পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ ওসমানের স্ত্রী রিনা আক্তার থেকে এক লক্ষ টাকা, সুচক্রদন্ডী গ্রামের মৃত কুমত চক্রবর্তীর ছেলে প্রাণতোষ চক্রবর্তী থেকে এক লক্ষ টাকা, একই গ্রামের তারেক হোসেনের স্ত্রী শিল্পী আকতার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা, প্রবীর সেন গুপ্তের ছেলে বিজয় সেন গুপ্ত থেকে দুই লক্ষ টাকা, তপন শীল থেকে দেড় লক্ষ টাকা, বাবলু দে থেকে এক লক্ষ, মধু বাবু থেকে দুই লক্ষ টাকা সহ প্রায় অর্ধ শত গ্রাহকের স্থায়ী আমানত, সঞ্চয় আমানত ও ঋণ আদায়ের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা মনিয়ে পালিয়ে যায় শংকর দে।
এদিকে, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ার পর গত প্রায় তিন মাস ধরে সমিতির কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। এতে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে গ্রাহকদের।তাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাছাড়া তালতলা চৌকি ব্যবসায়ী সমিতি থেকেও চার লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে ম্যানেজার শংকর দে ‘র মোবাইল নম্বরে কয়েক দফায় ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী চেমন আরা বেগম জানান, আমার পরিবারের সারাজীবনের কষ্টের জমানো টাকা বেশি লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় শংকর দে।
সমিতির পরিচালক অসিম বসু মল্লিক জানান,শংকর দে মাস্টার বেকারির মালিক হরিপদ দে’র ভাতিজা। তার মধ্যস্থতায় একবার পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করেছি। তিনি আরেকটু আন্তরিক হলে বিষয়টি সমাধান করা সহজ হতো। এরই মধ্যে হঠাৎ শংকর দে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রাহকরা। বর্তমানে সে কোথায় আছে, তাও জানি না। শুনেছি পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
মোবাইল নম্বর বন্ধ করে রাখায় তার সঙ্গে আমাদের কারও যোগাযোগ হচ্ছে না এবং বাড়িঘর তালা মারা।উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. শফিউল আজম জানান, সমিতির বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।