০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্কুলের জমিতে কলা গাছ রোপণ করে দখলের চেষ্টা

  • দিনার
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৪৮:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • 14

 কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করতে কলা গাছের চারা রোপন করেছে প্রভাবশালী একটি পরিবার। সেই গাছ রক্ষায় মাঠের বাশেঁর বেড়ায় জিআই তার দিয়ে চারপাশ ঘিরেও রাখা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের ৪১নং কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।তথ্য মতে, কামালপুর প্রাথমিক  বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৯ সালে ৫২ শতাংশ জায়গা দলিল করে দেন মরহুম জিন্নত আলী মুন্সি। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি করণ হয় ২০১৩ সালে । বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১২৬জন শিক্ষার্থী এবং ৬জন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ জায়গাটিকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করেন নি। চলতি বছর কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ১টি পাকা ভবন সরকার নিলামে বিক্রি করে দেয়। উক্ত ভবন টি ভেঙে নিয়ে যাওয়ায় পুরাতন  ভবনের  জায়গা খালি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে  স্কুলের জায়গায় শতাধিক কলা গাছের চারা রোপন করেন উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আসমত আলী গং।  ৪৫ বছরের পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলে নিতে মাঠ এবং  বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনের জায়গা জুড়ে কলা গাছের চারা রোপন করায় এ নিয়ে চরম ক্ষোভে ফুঁসছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে  প্রতিদিন মাঠটিতে খেলাধুলা করে আসছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  নিয়মিত শরীর চর্চা ও প্রত্যাহিক সমাবেশ হতো । বিদ্যালয়ের পুরাতন পাকা ভবনটি ভেঙে নিয়ে যাওয়ার পরে, জায়গা দখল করতে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শতাধিক কলা গাছের চারা রোপন করেন একই এলাকার প্রভাবশালী মোঃ আসমত আলী(৬০), সিদ্দিক মিয়া(৪৫), হাকিম মিয়া(২৫), বাচ্চু মিয়া(৫০) এবং রুমা বেগম(৪০),জালাল উদ্দিন(৫০), আসকর আলী(৫২)।  এসময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাঁধা দিলে হুমকি দেয়। তারপরে এ ঘটনায় নিকলী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। এত বছর কোনো সমস্যার কথা কানে শুনিনি। কিন্তু পুরাতন ভবনটি ভাঙার পর থেকে আসমত আলী গং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা স্কুলের মাঠে কলা গাছ লাগিয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, কলা গাছ লাগিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ দখল করায় তারা খেলাধুলা করতে পারে না। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়টির পাশের সড়কে খেলাধুলা করতে হয় তাদের।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোমলমতি শিশুদের জন্য মাঠের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, অবৈধভাবে কলার গাছ লাগিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দ্রুত বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

অভিযুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা এবং এত্র বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি  মোঃ আসমত আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, “আমাদের জায়গায় আমরা কলাগাছ লাগিয়েছি। এটা আমাদের সম্পত্তি। জোর করে কিছু করা হয়নি। বরং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই আমাদের জমি দখল করে রেখেছিলো। তিনি আরও জানান আদালতে এই স্কুলের জায়গা নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে।

৪১ নং কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১৯৭৯ সালে ৫৮ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা আসমত আলী গং ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ দখলে নিয়ে কলা গাছ লাগানোসহ বাঁশের খুটিতে জিআই তার দিয়ে আটক করে রেখেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। আটকে আছে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন।

জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ইসহাক রানা বলেন, কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৮ বছর আগের পুরাতন বিল্ডিং অকশনে দেওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ স্কুলের জায়গাটির মালিকানা দাবি করছে। এবিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনও কে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

নিকলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু সিদ্দিক মুঠোফোনে জানায়, ৪৭ বছর যাবত স্কুল এখানে এবং স্কুলের নামে দলিল আছে। বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি করার জন্য পুরাতন  ভবন অকশনে দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও জানান আসমত মিয়া গং স্কুলের জমিটি নিজের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছে। আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রেহানা মজুমদার মুক্তি ‘আজকের খবর’ কে বলেন, এ বিষয়ে  দুই পক্ষে মামলা চলমান  রয়েছে বিধায় আমরা কিছু করতে পারছিনা। এটা আদালতের বিষয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

গোপালগঞ্জের কাশিযানিতে ভুয়া সেনা সদস্য আটক

স্কুলের জমিতে কলা গাছ রোপণ করে দখলের চেষ্টা

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৪৮:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

 কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করতে কলা গাছের চারা রোপন করেছে প্রভাবশালী একটি পরিবার। সেই গাছ রক্ষায় মাঠের বাশেঁর বেড়ায় জিআই তার দিয়ে চারপাশ ঘিরেও রাখা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের ৪১নং কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।তথ্য মতে, কামালপুর প্রাথমিক  বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৯ সালে ৫২ শতাংশ জায়গা দলিল করে দেন মরহুম জিন্নত আলী মুন্সি। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি করণ হয় ২০১৩ সালে । বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১২৬জন শিক্ষার্থী এবং ৬জন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেউ জায়গাটিকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করেন নি। চলতি বছর কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ১টি পাকা ভবন সরকার নিলামে বিক্রি করে দেয়। উক্ত ভবন টি ভেঙে নিয়ে যাওয়ায় পুরাতন  ভবনের  জায়গা খালি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে  স্কুলের জায়গায় শতাধিক কলা গাছের চারা রোপন করেন উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আসমত আলী গং।  ৪৫ বছরের পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখলে নিতে মাঠ এবং  বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবনের জায়গা জুড়ে কলা গাছের চারা রোপন করায় এ নিয়ে চরম ক্ষোভে ফুঁসছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে  প্রতিদিন মাঠটিতে খেলাধুলা করে আসছিল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  নিয়মিত শরীর চর্চা ও প্রত্যাহিক সমাবেশ হতো । বিদ্যালয়ের পুরাতন পাকা ভবনটি ভেঙে নিয়ে যাওয়ার পরে, জায়গা দখল করতে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে শতাধিক কলা গাছের চারা রোপন করেন একই এলাকার প্রভাবশালী মোঃ আসমত আলী(৬০), সিদ্দিক মিয়া(৪৫), হাকিম মিয়া(২৫), বাচ্চু মিয়া(৫০) এবং রুমা বেগম(৪০),জালাল উদ্দিন(৫০), আসকর আলী(৫২)।  এসময়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বাঁধা দিলে হুমকি দেয়। তারপরে এ ঘটনায় নিকলী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। এত বছর কোনো সমস্যার কথা কানে শুনিনি। কিন্তু পুরাতন ভবনটি ভাঙার পর থেকে আসমত আলী গং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা স্কুলের মাঠে কলা গাছ লাগিয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, কলা গাছ লাগিয়ে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ দখল করায় তারা খেলাধুলা করতে পারে না। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়টির পাশের সড়কে খেলাধুলা করতে হয় তাদের।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কোমলমতি শিশুদের জন্য মাঠের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, অবৈধভাবে কলার গাছ লাগিয়ে বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দ্রুত বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

অভিযুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা এবং এত্র বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি  মোঃ আসমত আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, “আমাদের জায়গায় আমরা কলাগাছ লাগিয়েছি। এটা আমাদের সম্পত্তি। জোর করে কিছু করা হয়নি। বরং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই আমাদের জমি দখল করে রেখেছিলো। তিনি আরও জানান আদালতে এই স্কুলের জায়গা নিয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে।

৪১ নং কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ১৯৭৯ সালে ৫৮ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা আসমত আলী গং ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ দখলে নিয়ে কলা গাছ লাগানোসহ বাঁশের খুটিতে জিআই তার দিয়ে আটক করে রেখেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। আটকে আছে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন।

জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ইসহাক রানা বলেন, কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৮ বছর আগের পুরাতন বিল্ডিং অকশনে দেওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ স্কুলের জায়গাটির মালিকানা দাবি করছে। এবিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনও কে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

নিকলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু সিদ্দিক মুঠোফোনে জানায়, ৪৭ বছর যাবত স্কুল এখানে এবং স্কুলের নামে দলিল আছে। বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি করার জন্য পুরাতন  ভবন অকশনে দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও জানান আসমত মিয়া গং স্কুলের জমিটি নিজের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছে। আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রেহানা মজুমদার মুক্তি ‘আজকের খবর’ কে বলেন, এ বিষয়ে  দুই পক্ষে মামলা চলমান  রয়েছে বিধায় আমরা কিছু করতে পারছিনা। এটা আদালতের বিষয় বলে তিনি জানিয়েছেন।