০২:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নান্দাইলে বিলের মাঝে পুকুর খননের হিড়িক

ময়মনসিংহের নান্দাইলে অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে অস্বিস্ত সংকটে পড়ছে বলদা বিল। নান্দাইল উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বলদা বিলের খাস জায়গা দখল করে পুকুর খননের হিড়িক চলছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে যার মতো করে বা স্থানীয় তহসিলদার (নায়েব)কে ম্যানেজ করে সরকারি খাস জায়গা লীজ নিয়ে বিলের জায়গা দখলে নিয়েছে। বর্তমানে ওই বিলটিতে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে পুকুর খনন চলছে, তবে এ যেন দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসীর ধারণা এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে হয়ত বিল বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা।

সরজমিনে জানাগেছে, নান্দাইল উপজেলার উত্তরে সদর ইউনিয়নের বলদা বিলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠতো আশাপাশ সহ পাশ^বর্তী উপজেলার সাধারন মানুষ। এছাড়া ওই বিলে বোরো মৌসুমে ধান আবাদের যেন বাম্পার ফলন হতো। এ বিলের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে কাটলীপাড়া ও দাতারাটিয়া গ্রাম। উত্তরে দক্ষিণ রসুলপুর, উত্তর রসুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলী গ্রাম পশ্চিমে রয়েছে দাতারাটিয়া ও দত্তগ্রাম সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম। বিল পাড়ের সহ দূর দূরান্তের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিলের খাস সহ তাদের নামে থাকা জমি দখল করে মাছ চাষের জন্য ভেকু দিয়ে বড় বড় খামার তৈরী করা শুরু করেছেন। এতে মুক্ত জলাশয়ে বসবাসকারী মাছের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হবার পাশাপাশি উৎপাদন আরও কমে যাবে। তাছাড়া মাছ ধরা এবং বিক্রি করে সংসার চালানো পরিবারগুলো পেশা বদল করতে বাধ্য হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ২০০ একর জমিতে বিলটির অবস্থান হলেও এতে খাস জমির পরিমান হবে ৮০ থেকে ৯০ একর (১০ শতকে ১ কাঠা, ১০ কাঠাতে এক একর)। বর্তমানে কেউ কেউ মাছ চাষের জন্য নিজেদের জমির পাশাপাশি বিলের খাস জমি দখল করে সেখানে বড় বড় পুকুর খনন শুরু করেছেন। তাদের দাবি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন লোক এ ধরনের মৎস্য খামার তৈরীর সাথে জড়িত। খোঁজ নিয়ে জানগেছে, প্রতিবেশি কনু মেম্বার রফিক, আর্শেদ আলী, লাল মিয়া, মোর্শেদ আলী, তালহা, রবি, রিপন মিয়া, আজিজ মুন্সী, ফখরউদ্দিনসহ অনেকেই বিলে খামার তৈরীর সাথে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ খামার গড়ে তোলার কারণে বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত খালটিও বন্ধ হবার পথে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি পূর্বে তাঁর বাপ-দাদার নামে বিলে থাকা ৬৩ কাঠা জমিতে একটি এবং পরে তাদের খরিদ করা ৭২ কাঠা জমিতে আরেকটি সহ মোট দুইটি মৎস্য খামার দিয়েছেন। বিলের কোন জমি তিনি দখল করেননি। হাসনাত মাহমুদ তালহা জানান, তিনি তাদের পৈতৃক জমিতেই খামার করেছেন। বিলের কোন জমি দখল করেননি। নান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আজিজুল হক জানান, এরশাদ সরকার আমলে কেউ কেউ বিলের খাস জমি নিজেদের নামে কাগজপত্র করে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে এখন আর এমনটি হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে নান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, কেউ কেউ অনেক আগেই কাগজপত্র করে বিলের জমি দখলে নিয়েছেন, তা তিনি শুনেছেন। নান্দাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং মৎস্য খামার মালিকদের মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসার জন্য নোটিশ করেছেন।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

কালিগঞ্জে আল আমিন ইন্টারন্যাশনাল এর হজ্ব কাফেলা কর্মশালা

নান্দাইলে বিলের মাঝে পুকুর খননের হিড়িক

পোস্ট হয়েছেঃ ০৩:০১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ময়মনসিংহের নান্দাইলে অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে অস্বিস্ত সংকটে পড়ছে বলদা বিল। নান্দাইল উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বলদা বিলের খাস জায়গা দখল করে পুকুর খননের হিড়িক চলছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে যার মতো করে বা স্থানীয় তহসিলদার (নায়েব)কে ম্যানেজ করে সরকারি খাস জায়গা লীজ নিয়ে বিলের জায়গা দখলে নিয়েছে। বর্তমানে ওই বিলটিতে সরকারি নিয়মনীতি না মেনে পুকুর খনন চলছে, তবে এ যেন দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসীর ধারণা এভাবে দখল হতে থাকলে আগামীতে হয়ত বিল বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা।

সরজমিনে জানাগেছে, নান্দাইল উপজেলার উত্তরে সদর ইউনিয়নের বলদা বিলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠতো আশাপাশ সহ পাশ^বর্তী উপজেলার সাধারন মানুষ। এছাড়া ওই বিলে বোরো মৌসুমে ধান আবাদের যেন বাম্পার ফলন হতো। এ বিলের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে কাটলীপাড়া ও দাতারাটিয়া গ্রাম। উত্তরে দক্ষিণ রসুলপুর, উত্তর রসুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কুমারুলী গ্রাম পশ্চিমে রয়েছে দাতারাটিয়া ও দত্তগ্রাম সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রাম। বিল পাড়ের সহ দূর দূরান্তের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিলের খাস সহ তাদের নামে থাকা জমি দখল করে মাছ চাষের জন্য ভেকু দিয়ে বড় বড় খামার তৈরী করা শুরু করেছেন। এতে মুক্ত জলাশয়ে বসবাসকারী মাছের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হবার পাশাপাশি উৎপাদন আরও কমে যাবে। তাছাড়া মাছ ধরা এবং বিক্রি করে সংসার চালানো পরিবারগুলো পেশা বদল করতে বাধ্য হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ২০০ একর জমিতে বিলটির অবস্থান হলেও এতে খাস জমির পরিমান হবে ৮০ থেকে ৯০ একর (১০ শতকে ১ কাঠা, ১০ কাঠাতে এক একর)। বর্তমানে কেউ কেউ মাছ চাষের জন্য নিজেদের জমির পাশাপাশি বিলের খাস জমি দখল করে সেখানে বড় বড় পুকুর খনন শুরু করেছেন। তাদের দাবি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন লোক এ ধরনের মৎস্য খামার তৈরীর সাথে জড়িত। খোঁজ নিয়ে জানগেছে, প্রতিবেশি কনু মেম্বার রফিক, আর্শেদ আলী, লাল মিয়া, মোর্শেদ আলী, তালহা, রবি, রিপন মিয়া, আজিজ মুন্সী, ফখরউদ্দিনসহ অনেকেই বিলে খামার তৈরীর সাথে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ খামার গড়ে তোলার কারণে বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত খালটিও বন্ধ হবার পথে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি পূর্বে তাঁর বাপ-দাদার নামে বিলে থাকা ৬৩ কাঠা জমিতে একটি এবং পরে তাদের খরিদ করা ৭২ কাঠা জমিতে আরেকটি সহ মোট দুইটি মৎস্য খামার দিয়েছেন। বিলের কোন জমি তিনি দখল করেননি। হাসনাত মাহমুদ তালহা জানান, তিনি তাদের পৈতৃক জমিতেই খামার করেছেন। বিলের কোন জমি দখল করেননি। নান্দাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) আজিজুল হক জানান, এরশাদ সরকার আমলে কেউ কেউ বিলের খাস জমি নিজেদের নামে কাগজপত্র করে নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে এখন আর এমনটি হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে নান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, কেউ কেউ অনেক আগেই কাগজপত্র করে বিলের জমি দখলে নিয়েছেন, তা তিনি শুনেছেন। নান্দাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান জানান, বিষয়টি জানার পর তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন এবং মৎস্য খামার মালিকদের মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসার জন্য নোটিশ করেছেন।