০৬:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদুল আযহা: ত্যাগ, সচেতনতা ও শৃঙ্খলার এক মহান শিক্ষাদান

  • মো: আইয়ুব আলী
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৫:৩৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • 21

📍সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে এই দিনটি উদযাপিত হয়। কুরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা একজন মুমিনের ভেতরকার আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বাস্তব প্রতিফলন।

🔶 করণীয়: শরিয়ত সম্মত পালন ও মানবিকতার অনুশীলন

  1. তাকবীর তাশরিক পাঠ: ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পরে তাকবীর বলা সুন্নাত।

  2. ঈদের নামাজ আদায়: নির্ধারিত সময় ও নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল আযহার জামাতে অংশগ্রহণ করা ঈমানি দায়িত্ব।

  3. শরিয়ত মোতাবেক কুরবানি: পশু কুরবানি যেন যথাযথ নিয়ম ও দয়া সহকারে করা হয়। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

  4. পরিচ্ছন্নতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা: কুরবানির স্থান পরিষ্কার রাখা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা নাগরিক দায়িত্ব। স্থানীয় পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  5. গোশত বিতরণে ভারসাম্য বজায় রাখা: আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে কুরবানির গোশত সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।

  6. চামড়া যথাযথ সংরক্ষণ: চামড়া বিক্রির অর্থ যেন সৎ কাজে ব্যয় হয় এবং চামড়া নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

❌ বর্জনীয়: অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ

  1. দেখনদারি ও অপচয়: বড় পশু কেনার প্রতিযোগিতা, সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শনী, কিংবা আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে কুরবানি করা ইসলামী আদর্শবিরোধী।

  2. জবাইয়ের অশালীনতা: সবার সামনে কুরবানি করা, শিশুদের চোখের সামনে রক্তাক্ত দৃশ্য উপস্থাপন করা অনুচিত।

  3. পরিবেশ দূষণ: কুরবানির বর্জ্য রাস্তায় বা নালায় ফেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলা মারাত্মক অপরাধ।

  4. অমানবিক আচরণ: পশু মারার সময় নির্দয়তা, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগেই চামড়া ছাড়ানো শরিয়তবিরোধী ও নিষিদ্ধ।

  5. ধর্মীয় গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানো: ঈদের এই পবিত্র সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা কুসংস্কার ছড়ানো সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে।

🗣️ বিশেষজ্ঞদের মতামত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদুল আযহা কেবল পশু কুরবানির উৎসব নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সহাবস্থান ও পরিবেশ সচেতনতার বাস্তব শিক্ষা দেয়। সমাজকে এই উপলক্ষে আরও সচেতন হওয়া দরকার।”

🕌 ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:

ইসলাম ধর্ম কুরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিযি)

🔚 উপসংহার: ঈদুল আযহা আমাদের শিক্ষা দেয়—ত্যাগই শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই ত্যাগ হতে হবে হৃদয় ও চরিত্রের, হতে হবে সমাজ ও পরিবেশ সচেতনতায় দৃঢ়। কুরবানির মাহাত্ম্য যেন শুধু রীতিনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হোক মানবতা, শৃঙ্খলা ও ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল উপলক্ষ।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুড়ীতে নিসচা’র সড়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

ঈদুল আযহা: ত্যাগ, সচেতনতা ও শৃঙ্খলার এক মহান শিক্ষাদান

পোস্ট হয়েছেঃ ০৫:৩৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

📍সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে এই দিনটি উদযাপিত হয়। কুরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা একজন মুমিনের ভেতরকার আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বাস্তব প্রতিফলন।

🔶 করণীয়: শরিয়ত সম্মত পালন ও মানবিকতার অনুশীলন

  1. তাকবীর তাশরিক পাঠ: ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পরে তাকবীর বলা সুন্নাত।

  2. ঈদের নামাজ আদায়: নির্ধারিত সময় ও নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল আযহার জামাতে অংশগ্রহণ করা ঈমানি দায়িত্ব।

  3. শরিয়ত মোতাবেক কুরবানি: পশু কুরবানি যেন যথাযথ নিয়ম ও দয়া সহকারে করা হয়। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

  4. পরিচ্ছন্নতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা: কুরবানির স্থান পরিষ্কার রাখা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা নাগরিক দায়িত্ব। স্থানীয় পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  5. গোশত বিতরণে ভারসাম্য বজায় রাখা: আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে কুরবানির গোশত সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।

  6. চামড়া যথাযথ সংরক্ষণ: চামড়া বিক্রির অর্থ যেন সৎ কাজে ব্যয় হয় এবং চামড়া নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

❌ বর্জনীয়: অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ

  1. দেখনদারি ও অপচয়: বড় পশু কেনার প্রতিযোগিতা, সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শনী, কিংবা আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে কুরবানি করা ইসলামী আদর্শবিরোধী।

  2. জবাইয়ের অশালীনতা: সবার সামনে কুরবানি করা, শিশুদের চোখের সামনে রক্তাক্ত দৃশ্য উপস্থাপন করা অনুচিত।

  3. পরিবেশ দূষণ: কুরবানির বর্জ্য রাস্তায় বা নালায় ফেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলা মারাত্মক অপরাধ।

  4. অমানবিক আচরণ: পশু মারার সময় নির্দয়তা, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগেই চামড়া ছাড়ানো শরিয়তবিরোধী ও নিষিদ্ধ।

  5. ধর্মীয় গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানো: ঈদের এই পবিত্র সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা কুসংস্কার ছড়ানো সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে।

🗣️ বিশেষজ্ঞদের মতামত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদুল আযহা কেবল পশু কুরবানির উৎসব নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সহাবস্থান ও পরিবেশ সচেতনতার বাস্তব শিক্ষা দেয়। সমাজকে এই উপলক্ষে আরও সচেতন হওয়া দরকার।”

🕌 ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:

ইসলাম ধর্ম কুরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিযি)

🔚 উপসংহার: ঈদুল আযহা আমাদের শিক্ষা দেয়—ত্যাগই শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই ত্যাগ হতে হবে হৃদয় ও চরিত্রের, হতে হবে সমাজ ও পরিবেশ সচেতনতায় দৃঢ়। কুরবানির মাহাত্ম্য যেন শুধু রীতিনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হোক মানবতা, শৃঙ্খলা ও ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল উপলক্ষ।