আব্দুন নুর আজাদ, বিশেষ প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও 
পৃথিবীর বুকে আজ এক অনন্য দিন—৯ জিলহজ ১৪৪৬ হিজরি, ৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। আজ মুসলমানদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদত, পবিত্র হজের মূল পর্ব ‘ওকুফে আরাফা’ পালিত হচ্ছে। মক্কার বাইরে বিস্তৃত আরাফাতের প্রান্তরে লাখো মানুষ আজ একসাথে দাঁড়িয়ে আছে—আত্মশুদ্ধি, তওবা আর আল্লাহর করুণা লাভের আশায়।
আজকের এই দিনটিকে ইসলাম আখ্যা দিয়েছে হজের মেরুদণ্ড হিসেবে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা দিয়েছিলেন—”হজ মানে আরাফা”। এই দিনেই তিনি মানবজাতির জন্য রেখে গেছেন তাঁর চিরস্মরণীয় বিদায় হজের ভাষণ, যা ছিল সমতা, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার এক ঐতিহাসিক ঘোষণা।
আরাফাতের মাঠে আজ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চোখে অশ্রু, অন্তরে অনুশোচনা, মুখে দোয়ার ধ্বনি। ধনী-গরিব, শ্বেত-শ্যাম, আরব-আজম—সব পরিচয় ঝরে ফেলে তারা আজ শুধুই আল্লাহর বান্দা। কেউ দোয়া করছে নিজের গোনাহ মাফের জন্য, কেউ প্রার্থনায় ব্যস্ত পরিবারের জন্য, কেউ দেশ ও বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনায়।
এই দিনটি কেবল একটি আচার পালন নয়, বরং একটি অন্তর্জাগরণের উপলক্ষ। হজ আমাদের শিখিয়ে দেয় বিনয়, সহনশীলতা, ক্ষমা ও করুণার গুরুত্ব। শিখিয়ে দেয়—আসল পরিচয় হলো মানবতা, সকল বাহ্যিক পরিচয়ের ওপরে উঠে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলা।
বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ কোটি মুসলমান রোজা রেখে, নামাজ ও দোয়ায় অংশ নিচ্ছেন। এ দিনটি পরিচিত ‘মাগফিরাতের দিন’ হিসেবে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা অগণিত মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন—এমন ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং রাসূল (সা.)।
আরাফাতের এই প্রার্থনা শুধু মাঠে উপস্থিত হাজীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা দুনিয়ার অসংখ্য মুসলমান আজ দূর থেকে মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে সেই পবিত্র প্রান্তরের দিকে। হৃদয়ের গভীরে এক অদ্ভুত আকুতি—আল্লাহ যেন তাকেও ক্ষমা করে দেন।
হজ থেকে ফিরে একজন মানুষ হয়ে ওঠেন আলোকিত, পরিশুদ্ধ, অনুতপ্ত। তার মধ্যে থাকে এক নতুন আত্মা, এক নতুন লক্ষ্য। ইসলাম এটিকে বলে—পাপমুক্ত এক নবজন্ম।
এই উপলক্ষে আমাদেরও প্রশ্ন রাখা উচিত নিজের কাছে—আমার ভেতরের অহংকারগুলো কি এখনো রয়ে গেছে? আমি কি বদলাতে পেরেছি নিজেকে? আমি কি এমন এক মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি, যাকে আল্লাহ ভালোবাসবেন?
আজকের হজ আমাদের জানিয়ে দেয়—ক্ষমা পাওয়ার দরজা এখনো খোলা। ফিরে আসার সুযোগ এখনো আছে। শুধুই প্রয়োজন একটু অনুতাপ, একটু কান্না, একটু আত্মদর্শন।
আজ হজ। আজ সেই দিন, যেদিন মানুষ আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে স্বীকার করে—”হে প্রভু, আমি ফিরে এসেছি। আমাকে গ্রহণ করো।”
