
বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি একটি ভয়াবহ নীরব মহামারি। এই ভাইরাসজনিত রোগ বাংলাদেশসহ সারা পুথিবীতে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের লিভার ক্ষয়, সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠছে।
যদিও এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য, তবু দেশের অধিকাংশ মানুষ এ রোগ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান সচেতন নন, অনেকেই জানেন না যে তাঁরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা।
এই প্রেক্ষাপটে “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল” কেন্দ্রীয় সংসদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল” এর উদ্যোগে এবং “ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ – ড্যাব” এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত “হেপাটাইটিস বি” টিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এই টিকা সম্পুর্ণ ফ্রি প্রদান করার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের লিভারে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে তা নষ্ট করে দেয়। এটি রক্ত ও দেহ তরলের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। অতীতে আমাদের সমাজে এ রোগ নিয়ে একধরনের ভ্রান্ত ধারণা এবং গোপনীয়তা ছিল।
যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেমন সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি সংক্রমণ প্রতিরোধের সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এই বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে একটি উদার ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপীঠে এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকর। ছাত্রদলের এই কর্মসূচি সেই ভবিষ্যতের দিকেই এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
প্রতিটি ধাপে ছিল তথ্যবহুল কার্যক্রম, হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রদান, ইত্যাদি কার্যক্রম। এতে করে শুধু টিকা গ্রহণই হয়নি, বরং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রোগটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
অভিনন্দনযোগ্য বিষয় হলো, এই পুরো কার্যক্রমটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিচালিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা যাতে কোনোরকম ভীতি বা সংকোচবোধ না করেন, সেজন্য বন্ধুসুলভ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
আর এই কার্যক্রমের পেছনে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন; সেচ্ছাসেবক, ডাক্তার, শিক্ষার্থী ও আয়োজকরা; তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলে নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এ মহতি উদ্যোগ কেবল একটি টিকা কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ, একধরনের নৈতিক অঙ্গীকার যা দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রসংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যতে এই কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত পরিসরে বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আয়োজকেরা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই নয়, আশপাশের এলাকার জনগণকেও অন্তর্ভুক্ত করে এই সচেতনতা ও টিকাদান কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করা হতে পারে, এমনটাই তাঁদের পরিকল্পনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক বলেন, “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, ধন্যবাদ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে, তাঁর নির্দেশনায় আমরা সবার মাঝে টিকা পৌঁছাতে চেষ্টা করেছি। আরো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, সেচ্ছাসেবী টিম সহ যারা এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের।”
তারা আরও বলেন, এখানেই শেষ নয়, বরং এটি হোক একটি দীপ্ত শুরু; হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের। যতদিন না প্রতিটি নাগরিক সুরক্ষিত হচ্ছে, ততদিন এই লড়াই থামবে না; এমন দৃঢ় প্রত্যয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এ আয়োজন এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে দেশের স্বাস্থ্যসচেতনতার ইতিহাসে।