
গাজীপুরের সি.এন.বি বাজার সংলগ্ন জংলা পাড়ায় মাদকের রমরমা ব্যবসা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি:
গাজীপুর মহানগরের প্রাণকেন্দ্র এক নম্বর সি.এন.বি বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত জংলা পাড়া এলাকাটি বর্তমানে এক ভয়াবহ মাদক বিপণনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এখানে প্রতিনিয়ত ১০০ জনেরও বেশি মাদক ডিলার একত্রিত হয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে, অথচ প্রশাসনের কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি।
মাদকের অভয়ারণ্য: সন্ধ্যা নামতেই জমজমাট মাদক কেনাবেচা
জানা গেছে, জংলা পাড়ার অলিগলি থেকে শুরু করে খোলা জায়গায় সন্ধ্যার পর শুরু হয় মাদক বেচাকেনার রমরমা বাণিজ্য। ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্য এখানে সহজলভ্য। বিক্রেতারা নানা বয়সী—কিশোর থেকে শুরু করে মধ্যবয়স্ক পর্যন্ত। ভয়াবহ বিষয় হলো, এখানে পরিবারভিত্তিক মাদক ব্যবসা চলছে—বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই একসাথে এই অবৈধ পেশায় যুক্ত।
গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ফিরে আবার একই অপরাধে
পুলিশ মাঝে মধ্যে অস্থায়ীভাবে অভিযান চালিয়ে কিছু মাদক কারবারীকে আটক করে। তবে স্থানীয়রা বলছে, এই অভিযান শুধুই লোক দেখানো। কারণ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই জায়গায় বসে মাদক বেচা-কেনা শুরু করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের আতঙ্ক ও হতাশা
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে যেতে ভয় লাগে। ছোট ছোট ছেলেরা পর্যন্ত এই মাদকের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। আমরা বারবার অভিযোগ করেও কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা দেখতে পাচ্ছি না।”
আরেকজন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী জানান,
“দোকান চালাতে ভয় লাগে। একদিকে ভাড়াটে বাহিনী, অন্যদিকে মাদকসেবীদের উৎপাত। পুলিশ কখনও আসে, আবার চলে যায়—কিন্তু সমস্যাটা থেকেই যায়।”
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
স্থানীয়দের অভিযোগ, গাজীপুর জেলা প্রশাসন এবং মহানগর পুলিশ দীর্ঘদিন ধরেই এ চক্র সম্পর্কে জানলেও এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী অভিযান বা পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হয়নি। কোনো ধরনের পুনর্বাসন, সচেতনতা বা মাদক প্রতিরোধ কর্মসূচিও এখানে দৃশ্যমান নয়।
কী করণীয়?
- স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বা বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা
- মাদককারবারীদের তালিকা করে নিয়মিত নজরদারি
- নারী ও শিশুদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি
- মাদকসেবীদের জন্য চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা
- সমাজ সচেতন মহল ও মিডিয়ার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি
উপসংহার:
গাজীপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের প্রাণকেন্দ্রে এভাবে মাদকের অবাধ বিস্তার শুধু সামাজিক অবক্ষয়ই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। প্রশাসনের উচিত এখনই কার্যকর ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া, নইলে এই মাদকচক্র পুরো শহরকেই গ্রাস করে ফেলবে।