০৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অ্যালবিয়ন’-এ শ্রমিকদের চার হাজার টাকার জীবন: উন্নয়ন নাকি দাসত্ব?

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত ‘অ্যালবিয়ন ল্যাবরেটরিজ’ দেশে ঔষধ উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ‘হিউম্যান’ ও ‘ভেটেরিনারি’ মেডিসিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে এই প্রতিষ্ঠান নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল বাইরের রূপের আড়ালে লুকিয়ে আছে নির্মম বাস্তবতা—শ্রমিক নিপীড়ন, ন্যায্য মজুরি বঞ্চনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম চিত্র।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানে মাসিক মজুরি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার টাকা, যা শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরির চেয়েও অনেক অনেক কম। নেই ছুটি, নেই স্বাস্থ্যসেবা, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনে ৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় কাজ করেও তারা পাচ্ছেন না অতিরিক্ত মজুরি বা ওভারটাইম সুবিধা।

একজন শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“মাস শেষে হাতে আসে চার হাজার টাকা, আর বুক ভরা হতাশা। এই টাকায় আমরা কীভাবে সন্তানদের খাবার দেব, ওষুধ কিনব, বা বাসা ভাড়া দেব ?”

‘অ্যালবিয়ন’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ১৮ বছরের নিচে কিশোরদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও দীর্ঘসময় কাজের জন্য, যা সরাসরি শ্রম আইন ও শিশুশ্রম নিরোধ আইন লঙ্ঘন। শ্রমিকরা বলেন, বাইরে থেকে দেখতে ফ্যাক্টরিটি যতই ঝকঝকে হোক না কেন, ভেতরে যেন এক আধুনিক দাসপ্রথার বাস্তব রূপায়ন।

এই বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।

শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করেন, বহুবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষের প্রভাব ও প্রলোভনের জোরেই বারবার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের চরম শ্রমিক বঞ্চনা শুধু শ্রম আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং দেশের শিল্প খাতের ভাবমূর্তি ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

প্রশ্ন উঠছে—এই চার হাজার টাকার চাকরিই কি উন্নয়নের প্রতীক? রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে যদি থাকে শ্রমিক নিপীড়ন, তবে সেই ‘সাফল্য’ কিসের?

এখন সময় এসেছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। অবিলম্বে ‘অ্যালবিয়ন’সহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি, সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসে শুধুই একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

শৈলকুপায় জমি দখল নিয়ে দাদাগিরি! পরিবারের রাস্তা বন্ধ করে অবরুদ্ধ

‘অ্যালবিয়ন’-এ শ্রমিকদের চার হাজার টাকার জীবন: উন্নয়ন নাকি দাসত্ব?

পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:৫০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত ‘অ্যালবিয়ন ল্যাবরেটরিজ’ দেশে ঔষধ উৎপাদন ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ‘হিউম্যান’ ও ‘ভেটেরিনারি’ মেডিসিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে এই প্রতিষ্ঠান নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল বাইরের রূপের আড়ালে লুকিয়ে আছে নির্মম বাস্তবতা—শ্রমিক নিপীড়ন, ন্যায্য মজুরি বঞ্চনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম চিত্র।

শ্রমিকদের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানে মাসিক মজুরি দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪ হাজার টাকা, যা শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরির চেয়েও অনেক অনেক কম। নেই ছুটি, নেই স্বাস্থ্যসেবা, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনে ৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় কাজ করেও তারা পাচ্ছেন না অতিরিক্ত মজুরি বা ওভারটাইম সুবিধা।

একজন শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“মাস শেষে হাতে আসে চার হাজার টাকা, আর বুক ভরা হতাশা। এই টাকায় আমরা কীভাবে সন্তানদের খাবার দেব, ওষুধ কিনব, বা বাসা ভাড়া দেব ?”

‘অ্যালবিয়ন’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ১৮ বছরের নিচে কিশোরদেরও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ও দীর্ঘসময় কাজের জন্য, যা সরাসরি শ্রম আইন ও শিশুশ্রম নিরোধ আইন লঙ্ঘন। শ্রমিকরা বলেন, বাইরে থেকে দেখতে ফ্যাক্টরিটি যতই ঝকঝকে হোক না কেন, ভেতরে যেন এক আধুনিক দাসপ্রথার বাস্তব রূপায়ন।

এই বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।

শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করেন, বহুবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষের প্রভাব ও প্রলোভনের জোরেই বারবার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের চরম শ্রমিক বঞ্চনা শুধু শ্রম আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং দেশের শিল্প খাতের ভাবমূর্তি ও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

প্রশ্ন উঠছে—এই চার হাজার টাকার চাকরিই কি উন্নয়নের প্রতীক? রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে যদি থাকে শ্রমিক নিপীড়ন, তবে সেই ‘সাফল্য’ কিসের?

এখন সময় এসেছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। অবিলম্বে ‘অ্যালবিয়ন’সহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি, সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসে শুধুই একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।