
২০২৪ সালের গণভ্যূত্থান শুধু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়, রাষ্ট্র-নাগরিক সম্পর্ক পুনর্গঠনেরও এক অনন্য অনুরণন। সেই আন্দোলনের মূল চেতনা বৈষম্যহীন সমাজ গঠন, যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গসংগঠন নাগরিকের অধিকার সমভাবে নিশ্চিত করবে।
তবে বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় সংবিধানের ধারা ২৯ যেখানে বলে — “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকিবে” — তা দীর্ঘকাল যাবৎ ম্লান ও মাদ্রাসার জেনারেল শিক্ষকদের একটি বড় অংশ পদবঞ্চিত। বাংলাদেশ সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জেনারেল (সাধারণ বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী) শিক্ষকরা। কারণ, বর্তমান প্রণীত এমপিও জনবল কাঠামো-তে শুধুমাত্র আরবি বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের (ফাজিল/কামিল) প্রশাসনিক পদ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলত, জেনারেল শিক্ষকদের জন্য প্রশাসনিক দায়িত্বের স্বপ্নও দেখা নিষেধ।
এই বৈষম্য নিয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বক্তব্যে উঠে আসে বঞ্চনার তীব্র ব্যথা:






অনেক অবসরপ্রাপ্ত ও প্রবীণ শিক্ষক অভিযোগ করেন, এই কোটানির্ভর কাঠামোতে অদক্ষ প্রশাসন ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মতে, জনবল কাঠামো যেন ‘ভাগ করো, শাসন করো’ নীতির এক রূপ, যেখানে গুটিকয়েক পদবি ও বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিকে গুরুত্ব দিয়ে বাকিদের মর্যাদাহীন করে রাখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু সাম্যের নীতিমালা লঙ্ঘন নয়, বরং মেধার অপমানও বটে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বপালন করা সাধারণ ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা যখন দেখেন নিজ প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির বাইরে, তখন তা রাষ্ট্রের সংবিধানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
অপরদিকে, সিদ্দিকী-চৌধুরী-মোল্লা-সরদার- মিয়াঁ-ভুঁইয়া-তালুকদার-খান-ভট্ টাচার্য-দাস-শেখ বংশীয় পরিচয়ধারী শিক্ষকদের অনেকেই বলেন, “বর্তমান সরকার হচ্ছে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিতে বিশ্বাসী সরকার। আমরা আশাবাদী, আসন্ন নীতিমালায় বৈষম্য দূর করে সকলকে সমান মর্যাদায় দেখবে রাষ্ট্র।”