
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরাঞ্চল ঘেরা নাসিরনগর উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এক সময় এলাকার মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই হাসপাতালটিই এখন চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ধুঁকছে, জরুরি অপারেশন থেকে শুরু করে মুমূর্ষু মাতৃ স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ সেবাও কার্যত বন্ধ। এতে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন এলাকার দরিদ্র, অসহায় ও বৃদ্ধ রোগীরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান বলছে, এখানে ২১ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ১৭টি পদই শূন্য। বিশেষ করে সার্জারি, মেডিসিন, শিশু রোগ, চর্ম ও যৌন রোগ এবং অ্যানেসথেসিয়ায় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। একটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে নেই কোনও সার্জন গাইনীকোলজিস্ট থাকলেও এমনকি সিজার করানোর মতো কোনো অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞও নেই!

৮০ বছরের বৃদ্ধা খায়রুন্নেসা কাঁদতে কাঁদতে বলেন,
“পেটে ব্যথা, কোমরে ব্যথা… হাঁটাইতে পারি না। হাসপাতালে আইছি দুইদিন হইছে, ডাক্তার বলেন ‘আরও ডাক্তার লাগবো’, কিন্তু কেউ আসে না। মরলে মরলাম, এখন কারো কোনো সময় নাই।”

সাধারণ গরিব গর্ভবতী নারীরা সরকারি হাসপাতালে এসে যখন শুনেন, “সিজার করতে পারবো না, অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার নাই”—তখন তাদের চোখে শুধু হতাশা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে যাচ্ছেন, যা তাদের সামর্থ্যের বাইরে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে অপারেশন থিয়েটার, ল্যাব ও রেডিওলজি ইউনিট থাকলেও, কার্যত সব অচল। শুধুমাত্র প্যাথলজিতে কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষা হলেও সেটিও সীমিত পরিসরে। এক্সরে মেশিন চালু থাকলে ও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর ভাট বলেন,
“আমি যতটা পারছি চেষ্টা করছি। কিন্তু জনবল ছাড়া সম্ভব না। একজন সার্জন, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকলে অপারেশন থিয়েটার চালু করতে পারছি না।”
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে এবং নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

নাসিরনগর উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম অনুন্নত হাওর এলাকা। এখানে প্রাইভেট ক্লিনিক বা বড় হাসপাতাল নেই বললেই চলে। ফলে, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিই ছিল সর্বশেষ ভরসা। কিন্তু সেই হাসপাতালেই যদি ৫০০ রোগীর জন্য মাত্র ৪ জন ডাক্তার থাকেন, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?







আজ যদি নাসিরনগরের অসহায় বৃদ্ধা, গর্ভবতী মা কিংবা শিশুদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না দেওয়া যায়—তবে সেটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, মানবিক ব্যর্থতাও। আমরা চাই, এই খবর শুধু খবরেই সীমাবদ্ধ না থেকে সরকারের দৃষ্টিগোচর হোক এবং বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হোক