
ঢাকার ধামরাইয়ে লোকজন নিয়ে এক পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) এর ক্রয়কৃত বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষ। সেই সাথে ঔই বাড়ির জমি দখল করে নেন। বাড়ি ভেঙে ঘরের টিন, বেসিংসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রি করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী। এ নিয়ে এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়।
রবিবার (৭ জুলাই) দুপুরের দিকে এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার সূতিপাড়া ইউনিয়নের বালিথা গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সূতিপাড়া ইউনিয়নের বালিথা এলাকায় বাংলাদেশ পুলিশের এক উপ পরিদর্শক ( এস আই) আব্দুস সাত্তার ২০১১ সালে ওই একই এলাকার মিনহাজ নামে এক ব্যক্তির কাছে থেকে ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করে ১৪ কক্ষের একটি টিনসেড বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দেন। এভাবেই চলে আসছিল দির্ঘ্য সময়। এরই মধ্যে পুলিশের ওই বাড়ির পাশের বাড়ি আল মামুন তাদের নিজেদের জায়গা দাবি করেন। এ নিয়ে এলাকায় দির্ঘ্য দিন ধরে দুই পক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক বার এলাকায় বসলেও এর কোন সুরাহা হয় নি। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান আব্দুস সাত্তার। কিন্তু এরই মধ্যে ঔই বাড়ির দখল নিতে আল মামুন গংরা পূর্বেও পুলিশের এস আই আব্দুস সাত্তার ও তার পরিবারের উপর উপর হামলা করেন বলে জানান ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার। বেশ কয়েকটি মামলাও হয় আদালতে। মামলার রায় আল মামুন গংদের পক্ষে গেলেও এখনো একটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঔই জমিতে দুই পক্ষই যেতে পারবে না। এমন রায়ে পুলিশের উপ- পরিদর্শক (এস আই) আব্দুস সাত্তার আদালতের রায় মেনে তার ১৪ কক্ষের বাড়িটি ভাড়া না দিয়ে খালি রাখেন।
কিন্তু এরই মধ্যে আজ রবিবার ( ৭ জুলাই) আল মামুন গংরা হেলমেট পড়ুয়া দেশিয় অস্ত্র হাতে প্রায় ১৫/২০ লোক নিয়ে ভেক্যু দিয়ে ঔই বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেন। বাড়ির যাবতীয় জিনিসপত্র জনসম্মুখে বিক্রি করেন। ঘরের টিনের চালা ও বেসিং বিক্রি করেন। ভুক্তভোগী সাত্তার ও তার পরিবার বিষয়টি জানান পর ঘটনাস্থলে যেতে সাহস পায় নি।
ভুক্তভোগী পুলিশের উপ- পরিদর্শক (এস আই) আব্দুস সাত্তার তার বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার কথা জানতে পেরে ধামরাই থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫/২০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ ধায়ের করেন।
আসামীরা হলেন – সাদ্দাম, আমির হোসেন, আল মামুন, আইবুর রহমান হেফজু, খালেক ও ইমরান। এছাড়াও অজ্ঞাত ১৫/২০ জন রয়েছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দির্ঘ্যদিন ধরে এই জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মারামারিও হয়েছে কয়েক বার। সাত্তার পুলিশ মারও খেয়েছেন। এখনো কোন সমস্যার সমাধান হয় নি।
পুলিশের উপ- পরিদর্শক আব্দুস সাত্তারের ভাতিজা রাসেল বলেন, ঔই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। মামলা স্ট্রে করে রাখা হয়েছে। ২০/২৫ জন লোক নিয়ে বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমার বাবা ভাই কেউ নাই তাই ভয়ে থানায় যেতে পারি নাই। আদালতে মামলা থাকাকালীন তারা বাড়ি ভাঙচুর করেন। এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হওয়া উচিত।
ভুক্তভোগী পুলিশের উপ- পরিদর্শক (এস আই) আব্দুস সাত্তার বলেন, ২০১১ সালে আমি ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করে ১৪ কক্ষের একটি টিনসেড বাড়ি করে ভাড়া দিয়ে আসছি। কিন্তু আমার প্রতিবেশি আল মামুন গংরা আমার ক্রয়কৃত জমির মালিকানা দাবি করেন। এর আগে ঔই জমি নিয়ে মারামারিও হয়েছে। শেষে আদালতে মামলা হয়। এখনো একটি মামলা চলমান রয়েছে। আদালত আদেশ দেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঔই জমিতে কেউ দখল যেতে পারবে না। আমি সরকারি চাকরি করি। আদালতের আদেশ মেনে বাড়ি ভাড়াও দেই নি। কিন্তু আল মামুন গংরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আজ রবিবার সকালের দিকে লোকজন নিয়ে বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেন। ঘরের চালার টিনসহ যাবতীয় জিনিসপত্র বিক্রি করেন। তাদের ভাড়া করা লোকজন হেলমেট পরিহিত ছিল। হাতে দেশিয় অস্ত্র ছিল। আমি জানার পরও ঘটনাস্থলে যেতে পারি নি। থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখনো পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেন নি। আদালতের রায় যদি আমার প্রতিপক্ষ পায় তারা বাড়ি দখল নিবে এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
অভিযুক্ত আল মামুন বলেন, ২০০৩ সালে এই জমি নিয়ে মিনহাজের বিরুদ্ধে একটি মামলা করি। ২০০৫ সালে আদালতের রায় পাই। কিন্তু ২০১১ সালে সাত্তার পুলিশ ঔই জমি ক্রয় করেন মামলা জানার পরও। এখনো আদালতে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলা স্ট্রে করেছেন সাত্তার পুলিশ। এখন স্ট্রে মামলাটি নিয়ে কাজ করবো। আদালতে মামলা থাকার পরও সাত্তার পুলিশের বাড়ি বা জমি দখল নিতে পারেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার জায়গায় আমি কাজ করবো এটাই তো স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলি এলাকায় একটি বাড়ি ভাঙার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী একটি অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে।