
ঐতিহ্যবাহী মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির কার্যকরী কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহাকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হাউস কমিটির সভাপতি, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়াকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ও একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকরী কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেকদিন আগেই। নানা প্রতিকূলতার কারণে নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আজকের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যেহেতু এ কমিটির মেয়াদ ইতোপূর্বে শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু আজ থেকে এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং আগামী নির্বাচনের আগপর্যন্ত সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করবেন। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল ও ফরহাদ রানা। অন্য সদস্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট আক্তার হোসেন সোহেল, মাহবুবুর রহমান বাচ্চু, শহিদুল ইসলাম, বলরাম বাহাদুর, এ এস এম শাহাদাত হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন নাসিম, আরিফ উল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম মাসুম, আইয়ুব আলী শিকদার, দেওয়ান মজিবুর রহমান, হোসেন রেনু, নুরুল আমিন খান, জসিম মোল্লা, মাহমুদ হাসান ফাহাদ, শহীদুল্লাহ শেখ, মোহাম্মদ আরফিন, ডা. মোশারফ।উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা হলেন- প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া। উপদেষ্টা ডা. জাহাঙ্গীর আলম, লায়ন পারভীন হোসেন ও ওয়াদুদ খান। মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ‘মুন্সীগঞ্জ সোসাইটি’ নামে যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৯৭৫/৬৩। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী এ এইচ এম সামস উদ দোহা ছিলেন এ সমিতির মূল উদ্দোক্তা।তার গ্রামের বাড়ি ছিল টঙ্গিবাড়ি উপজেলার সরিষাবন এবং তার শ্বশুর বাড়ি ছিল যশলদিয়ার গাজী বাড়ি। দোহা সাহেবের স্ত্রী মিসেস হামিদা দোহার (লাল বিবি) নামে ৬৬/এ ইন্দিরা রোড পশ্চিম রাজাবাজার ঢাকায় ৮ কাঠা জমি ছিল। মুন্সীগঞ্জ সমিতির নামে ঢাকাস্থ বিক্রমপুরের অসচ্ছল ছাত্রদের থাকার জন্য একটি ছাত্রাবাস করার লক্ষ্যে তিনি ১৯৬৩ সালে তা সমিতির নামে ‘ওয়াকফ’ করে দিলে গভর্নর মোনেম খান ২২ ডিসেম্বর ১৯৬৩ সালে সেটার ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ছাত্রাবাসের দ্বার উন্মোচন করেন জনাব সামস উদ দোহা ১৭ মার্চ ‘৬৭ সালে। শুরুর দিকে ফায়ার ব্রিগেডের ডিরেক্টর মুন্সীগঞ্জের সিদ্দিকুর রহমান, গজারিয়ার স্টেডিয়ামের ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী জনাব আব্দুল মতিন, শ্রীনগর দামলা গ্রামের লস্কর বাড়ির মোশারফ হোসেনসহ অনেকেই জড়িত ছিলেন। পরে নিজস্ব ফান্ড দিয়ে পশ্চিম লাগোয়া ৬ কাঠা জমি ক্রয় করা হলে ১৯৭৩ সালে এইটাকে বাড়িয়ে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। মুন্সীগঞ্জ নাম পরিবর্তন করে বিক্রমপুর সমিতি গঠন নিয়ে কমিটির মাঝে মতদ্বৈধতা দেখা দিলে দামলার মোশারফ হোসেনের মধ্যস্থতায় সমিতির নাম পরিবর্তন করে “মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতি” নামকরণ করা হয়। কমিটির সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে থাকলে সাবেক লঞ্চ ব্যবসায়ী মৌছা গ্রামের নজরুল ইসলাম খান বাদল সভাপতি হয়ে আসেন। তখন প্রস্তাব উঠেছিল পুরো ১৪ কাঠা জমি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে শেয়ারিং ভিত্তিতে আধুনিক ভবন নির্মাণ করে ছাত্রাবাসের অবয়ব বৃদ্ধি করার। কিন্তু অনেকের আপত্তি উঠে দাতা হামিদা দোহার ওয়াকফ চুক্তির শর্ত নিয়ে। ২০১২ সালে দোতলা ভবনকে তিনতলা করার জন্য একটি ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন এমপি মিজানুর রহমান খান দিপু কিন্তু ফান্ডের অভাবে তা আর হয়ে উঠেনি। বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ পর্যন্ত এসে সব কিছু থমকে আছে। বিক্রমপুরের আদি সংগঠন মুন্সীগঞ্জ- বিক্রমপুর সমিতির অফিসটি প্রচার বিমূখ। খু্ঁজে পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। এখনো শতেক খানেক ছাত্র এখানে থাকেন। মশিউর রহমান নামে এক তরুন হোস্টেল তত্বাবধায়ক ও প্রবীন বাবুর্চি আব্দুল মতিন আছেন। ভবনগুলোর সংস্কার নেই, চেয়ার টেবিল নেই বললেই চলে, হল রুমে হল কার্যকর নেই, ২/৩ জন ছাত্র এখানে বেঞ্চিতে বসে পড়ে। চারদিকে ময়লার ভাগার, নীচের রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন স্যাঁতসেঁতে, পুরাতন ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ছাত্রদের থাকার স্থানও স্যাঁতস্যাঁতে। অথচ অনেক বিখ্যাত লোকেরা এই সমিতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ বিত্ত, জ্ঞান গরিমায় বিক্রমপুর একটি প্রসিদ্ধ অঞ্চল। এই অঞ্চলের নামে সমিতির ভবন এবং কার্যক্রমের বেহাল দশা দেখে বিস্মিত হন সকলে। নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা তারা যদি আন্তরিকতার সহিত কাজ করেন তাহলে এই সংগঠনটি অবশ্যই গর্ব করার মতো সংগঠনে পরিণত হবে।