
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পুলিশের পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও সত্য উদঘাটনের নিরলস প্রচেষ্টায় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছেন মো. মিলন মিয়া (২৭) ও মো. এরশাদুল হক (৩৫)। একইসঙ্গে পূর্বপরিকল্পিত এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা মো. জুয়েল হক (২৭) ও মো. মনির হোসেন (২৮) কে গ্রেফতার করেছে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ৭ নম্বর নেওয়াশী ইউনিয়নের এগারো মাথা বাজার এলাকায় তালুকদার এন্টারপ্রাইজের সামনে সন্দেহজনকভাবে মোটরসাইকেলের সিটের নিচে ইয়াবা রাখা হয়েছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই (নিঃ) অলকান্ত রায় ও সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে তারা একটি সুজুকি জিকজার মোটরসাইকেল থেকে ৬৭ পিস গোলাপী রঙের ইয়াবা উদ্ধার করেন। উপস্থিত জনতার সামনেই মোটরসাইকেলের সিট কভারের নিচ থেকে বিশেষ কায়দায় রাখা ইয়াবা জব্দ করা হয় এবং মিলন মিয়া ও এরশাদুল হককে প্রাথমিকভাবে আটক করা হয়।
তবে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ও ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণে পুলিশের কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়। এরপর থানা ইনচার্জ মো. রেজাউল করিম রেজা, সেকেন্ড অফিসার অপূর্ব কুমার বর্মণ, এসআই আকাশ, এসআই অলকান্ত রায়সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা গভীর রাতে তদন্ত অব্যাহত রাখেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে প্রায় চার মাস আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বন্ধু মিলন মিয়াকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে জুয়েল হক ও মনির হোসেন এই ফাঁদ পাতেন। তারা ৬৭ পিস ইয়াবা ১০ হাজার টাকায় সংগ্রহ করে সুকৌশলে মিলনের মোটরসাইকেলে লুকিয়ে রাখে। এরপর মনির হোসেন পুলিশের সোর্স সেজে খবর দেয়, যাতে মিলনকে হাতেনাতে ধরা যায়।
এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ফুলবাড়ী থানা পুলিশের সহায়তায় ১৫ জুন ভোররাতে জুয়েল হককে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে পুরো পরিকল্পনার বিস্তারিত। পুলিশ প্রমাণ পায়, মিলন ও এরশাদুল হক এই ঘটনার সঙ্গে মোটেও জড়িত নন। পরে তাদের পরিবারের জিম্মায় মুক্তি দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, জুয়েল হক ও মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) সারণির ১০(ক)/৪১ ধারায় মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়।
নাগেশ্বরী থানা পুলিশের এই সাহসী ও মানবিক ভূমিকা এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বেড়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছে। তারা পুলিশের এমন নিষ্ঠা ও পেশাদার দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।