
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে পৃথক দুটি ঝরনায় ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা ঝরনায় এবং রোববার (১৫ জুন) মিরসরাইয়ের রূপসী ঝরনায় এই দুই দুর্ঘটনা ঘটে।
সীতাকুণ্ডে প্রাণ হারালেন তাহসিন আনোয়ার
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের সহস্রধারা ঝরনায় ভ্রমণে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ১৭ বছর বয়সী তাহসিন আনোয়ারের। তিনি চট্টগ্রামের ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার লুৎফুর নাহার এবং কেইপিজেডের প্রকৌশলী মো. আনোয়ার কবিরের একমাত্র সন্তান। তাহসিনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর থানার পাঁচপাড়া চন্দ্রগঞ্জ এলাকায়।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র তাহসিন তার আরও ছয় বন্ধু—নাফিস, কফিল, ফাহিম, সুমিত, ইবরার ও আহাদকে সঙ্গে নিয়ে ঝরনায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। বন্ধুরা জানান, বিকেল ৩টার দিকে ঝরনায় ঘোরাঘুরির পর কাদা মাটি পরিষ্কার করতে তাহসিন লেকের কিনারায় গেলে অসাবধানতাবশত পানিতে পড়ে যান। সাঁতার না জানায় তিনি দ্রুত পানির নিচে তলিয়ে যান।স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে প্রায় ৩০ ফুট গভীর লেক থেকে তাহসিনের মরদেহ উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে রাতেই উপস্থিত হন তাহসিনের মা-বাবা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফখরুল ইসলাম জানান, পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রূপসী ঝরনায় ডুবে মৃত্যু আসিফ উদ্দিনের
অন্যদিকে, রোববার (১৫ জুন) দুপুরে মিরসরাই উপজেলার রূপসী ঝরনায় ডুবে মারা যান মো. আসিফ উদ্দিন (২৪)। তিনি চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ি কামাল গেট এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামিয়া কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।নিহত আসিফ সকালে পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে রূপসী ঝরনা ঘুরতে যান। দুপুর ১২টার দিকে ঝরনার দ্বিতীয় ধাপের একটি কূপে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যান তিনি। বন্ধুরা বহু চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জাতীয় জরুরি সেবা নেয়। পরে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ঘটনাস্থলে গিয়ে গভীর কূপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন।
স্থানীয় নিজামপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, আসিফের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আইনি কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
পর্যটন এলাকা ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ?
ঘন ঘন এমন দুর্ঘটনায় স্থানীয় পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও মনিটরিং-এর অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশেষ করে ঝরনার মতো দুর্গম এলাকায় প্রয়োজনীয় সতর্কতা, গাইডলাইন ও জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থার অভাব প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।