১২:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্মৃতির জানালায় বসে আপনাকে খুঁজি, আব্বু

“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা।”
(হে আমার প্রভু, তাদের প্রতি সেইভাবে রহম করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছিলেন।)
আজ ছিল বাবা দিবস।
সামাজিক মাধ্যমে অনেক ছবি, অনেক স্মৃতিচারণ, অনেক আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখলাম। কেউ বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে, কেউ তাঁর সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি পোস্ট করেছে, আর আমি?
আমি আজও কেবল স্মৃতির জানালায় বসে আপনাকে খুঁজে বেড়াই, আব্বু।
২০১২ সালের ৮ই ডিসেম্বর—একটা কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। হঠাৎ খবর এলো—আমার আব্বু আর নেই।
তখন আমি ছোট। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, কী ভয়ংকর শূন্যতা নেমে এসেছে আমাদের ঘরে। কিন্তু আজ, একযুগ পর, যখন জীবনের মানে বোঝার মতো বয়স হয়েছে, তখন বুঝি—সে দিন আমার জীবনে যে স্থায়ী শোক নেমে এসেছিল, তার শেষ নেই।
আব্বু নিজে হাফেজ ছিলেন না, কিন্তু একটাই স্বপ্ন ছিল “আমার ছেলে যেন হাফেজ হয়।”
আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি। আপনার মুখে সেই গর্বিত হাসিটা কখনো দেখতে পাইনি, কিন্তু কল্পনায় আজও শুনি “আমার ছেলে হাফেজ হয়েছে!” এই কল্পনাই হয়তো আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে, বাঁচিয়ে রাখছে।
আজ আমি শুধু একজন হাফেজ নই, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সমাজে সক্রিয়, নানা দায়িত্বে জড়িত। অনেক কিছু অর্জন করেছি। কিন্তু কী লাভ? আপনি তো নেই, আব্বু!
আপনি থাকলে আজকের এই সাফল্যগুলো কেমন হতো, তা ভাবলেই চোখ ভিজে আসে।
আমরা পাঁচ ভাইবোন, আপনার রেখে যাওয়া পাঁচ নক্ষত্র। আজ সবাই নিজের পথে হাঁটছি। কিন্তু সেই ছায়াটা, যেটা আমাদের সব দুঃসময়ে রক্ষা করত, সেই ছায়া তো আর ফিরে আসবে না।
তবুও আপনার আদর্শ আমাদের পথ দেখায়, আপনার ত্যাগ আমাদের জীবনের আলো হয়ে জ্বলে।
আপনার রেখে যাওয়া প্রতিটি স্মৃতি আজও জীবন্ত।
আমি যতবার তারাবি পড়াই, মনে হয় যদি আপনি বেঁচে থাকতেন তাহলে কতই না খুশি হতেন, আমার পেছনে দাড়িয়ে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত শুনতেন। হয়তো গর্বে চোখের কোণ ভিজে উঠেতো আপনার ।
আজ এই বাবা দিবসে আমার কিছু পোস্ট নেই, নেই কোনো হাসিমাখা ছবি। শুধু একটা দোয়া, একটা দীর্ঘশ্বাস।
হে আল্লাহ! আমার আব্বুর কবরকে জান্নাতের বাগান করে দিন। তাঁর প্রতিটি কষ্টকে জান্নাতের সওগাত বানিয়ে দিন।
আমাকে দিন সেই শক্তি, যেন আমি তাঁর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি।
আব্বু, আপনি ছিলেন আমার ছায়া, আমার প্রথম বটবৃক্ষ, আমার প্রেরণা।
আজও আপনার অভাব প্রতিদিন অনুভব করি।
স্মৃতির জানালায় বসে, আমি আজও আপনাকে খুঁজি।
আপনার ভালোবাসা চিরকাল আমার হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

নালিতাবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী মহা পবিত্র ঈদে গাদীরে খুম উৎযাপন

স্মৃতির জানালায় বসে আপনাকে খুঁজি, আব্বু

পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:২৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা।”
(হে আমার প্রভু, তাদের প্রতি সেইভাবে রহম করো, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছিলেন।)
আজ ছিল বাবা দিবস।
সামাজিক মাধ্যমে অনেক ছবি, অনেক স্মৃতিচারণ, অনেক আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখলাম। কেউ বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে, কেউ তাঁর সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি পোস্ট করেছে, আর আমি?
আমি আজও কেবল স্মৃতির জানালায় বসে আপনাকে খুঁজে বেড়াই, আব্বু।
২০১২ সালের ৮ই ডিসেম্বর—একটা কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল। হঠাৎ খবর এলো—আমার আব্বু আর নেই।
তখন আমি ছোট। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি, কী ভয়ংকর শূন্যতা নেমে এসেছে আমাদের ঘরে। কিন্তু আজ, একযুগ পর, যখন জীবনের মানে বোঝার মতো বয়স হয়েছে, তখন বুঝি—সে দিন আমার জীবনে যে স্থায়ী শোক নেমে এসেছিল, তার শেষ নেই।
আব্বু নিজে হাফেজ ছিলেন না, কিন্তু একটাই স্বপ্ন ছিল “আমার ছেলে যেন হাফেজ হয়।”
আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি। আপনার মুখে সেই গর্বিত হাসিটা কখনো দেখতে পাইনি, কিন্তু কল্পনায় আজও শুনি “আমার ছেলে হাফেজ হয়েছে!” এই কল্পনাই হয়তো আমাকে চালিয়ে নিচ্ছে, বাঁচিয়ে রাখছে।
আজ আমি শুধু একজন হাফেজ নই, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সমাজে সক্রিয়, নানা দায়িত্বে জড়িত। অনেক কিছু অর্জন করেছি। কিন্তু কী লাভ? আপনি তো নেই, আব্বু!
আপনি থাকলে আজকের এই সাফল্যগুলো কেমন হতো, তা ভাবলেই চোখ ভিজে আসে।
আমরা পাঁচ ভাইবোন, আপনার রেখে যাওয়া পাঁচ নক্ষত্র। আজ সবাই নিজের পথে হাঁটছি। কিন্তু সেই ছায়াটা, যেটা আমাদের সব দুঃসময়ে রক্ষা করত, সেই ছায়া তো আর ফিরে আসবে না।
তবুও আপনার আদর্শ আমাদের পথ দেখায়, আপনার ত্যাগ আমাদের জীবনের আলো হয়ে জ্বলে।
আপনার রেখে যাওয়া প্রতিটি স্মৃতি আজও জীবন্ত।
আমি যতবার তারাবি পড়াই, মনে হয় যদি আপনি বেঁচে থাকতেন তাহলে কতই না খুশি হতেন, আমার পেছনে দাড়িয়ে নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত শুনতেন। হয়তো গর্বে চোখের কোণ ভিজে উঠেতো আপনার ।
আজ এই বাবা দিবসে আমার কিছু পোস্ট নেই, নেই কোনো হাসিমাখা ছবি। শুধু একটা দোয়া, একটা দীর্ঘশ্বাস।
হে আল্লাহ! আমার আব্বুর কবরকে জান্নাতের বাগান করে দিন। তাঁর প্রতিটি কষ্টকে জান্নাতের সওগাত বানিয়ে দিন।
আমাকে দিন সেই শক্তি, যেন আমি তাঁর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি।
আব্বু, আপনি ছিলেন আমার ছায়া, আমার প্রথম বটবৃক্ষ, আমার প্রেরণা।
আজও আপনার অভাব প্রতিদিন অনুভব করি।
স্মৃতির জানালায় বসে, আমি আজও আপনাকে খুঁজি।
আপনার ভালোবাসা চিরকাল আমার হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে।