
ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাতী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা-তে নবগঠিত এড-হক পরিচালনা কমিটি বরণ উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের (এড-হক) সভাপতি ও আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম খান মণি। সভায় নবনিযুক্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। স্থানীয় বাসিন্দা, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের উত্তরসূরি ও বিভিন্ন মহল্লাভিত্তিক শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই আমন্ত্রণ না পাওয়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় নাগরিকবৃন্দ ও শিক্ষানুরাগীগণ বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু কমিটির দ্বারা পরিচালিত হয় না, এর পেছনে থাকে এলাকার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ভালোবাসা। স্থানীয়দের উপেক্ষা করলে সেটা ভবিষ্যতে বিভাজন তৈরি করতে পারে এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মো. আমিনুল ইসলাম খান মণি শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরিচালনায় স্বচ্ছতা, মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জন এবং একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমরা ম্যানেজিং কমিটির ১৭টি কার্যাবলি বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করবো। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই।” তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি যেন ধর্মীয়, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায়ও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে—সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করেছে নবগঠিত এড-হক কমিটি। উল্লেখ্য, আমিনুল ইসলাম খান মণি যিনি আঠারোবাড়ি এম.সি. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল খালেক-এর সুযোগ্য সন্তান।
প্রতিষ্ঠানের সুপার ও কমিটির সদস্য-সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “সরাতী হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের শিক্ষাক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে, যা আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।” সহ-সুপার জহির উদ্দিন বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানা অর্জন এনে দিচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠান ও এলাকার সম্মান বৃদ্ধি করছে। আমরা তাদের আরও ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত করতে সচেষ্ট।” মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষিকা নাজমা মোমতাহিনা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে—এই প্রার্থনা শুধু নিজের সন্তানের জন্য নয়, আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে আমরা শিক্ষকরা সর্বদা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” সামগ্রিকভাবে মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক মো. সোলেমান মিয়া, যিনি এনটিআরসিএ নিয়োগপ্রাপ্ত, সভায় বলেন, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকতে হলে শুধু পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা নয়, বরং প্রযুক্তি, ভাষা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে গড়ে উঠতে হবে শিক্ষার্থীদের। এজন্য শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী ও কমিটির সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি।”