
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে ছেলের শরীরে অপহরণকারীদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ পিতা। রবিবার (১৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহত সুরুজ মিয়া (৭০) দাউদকান্দির মারুকা ইউনিয়নের চক্রতলা গ্রামের বাসিন্দা। তার ছেলে পাবেল (২৫) ওই দিন বিকেলে গৌরীপুর বাজারে কবুতর কিনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাবেল ঈদগাঁ মাঠসংলগ্ন এলাকায় কবুতর কিনতে গেলে প্রথমে দুজন ব্যক্তি তাকে ঘিরে ধরে ‘টাকা দে, তুই টাকা নিয়েছিস’ বলে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আরও কয়েকজন এসে তাকে চোখ বেঁধে পাশের পশ্চিম বাজারের একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা দিতে দেরি করায় অপহরণকারীরা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে পরিবার মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাবেলকে ছেড়ে দেয় তারা।
নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি ফিরে আসা পাবেলকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তার বাবা সুরুজ মিয়া। ছেলের শরীরজুড়ে নীল-কালো আঘাতের দাগ ও ক্লান্ত, আতঙ্কিত চেহারা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জ্ঞান হারান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাবেলের ফুফাতো ভাই কাইয়ুম হাসান জানান, “পাবেল কবুতর কিনতে গিয়ে অপহরণ হয়। তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ছাড়া পাওয়ার পর শরীরে এত দাগ ছিল যে তার বাবা সহ্য করতে পারেননি। ছেলের ওই অবস্থা দেখে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।”
ঘটনার পর পাবেলের পরিবারের সদস্যরা শোকের মধ্যে ডুবে আছেন। তার মা ও ভাই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী বলেন, “ঘটনাটি আমাদেরকে কেউ সরাসরি জানায়নি। তবে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানার পর পুলিশ পাঠানো হয়েছে তদন্তের জন্য।”
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় কবি, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী মো. আলী আশরাফ খান বলেন, “একজন পিতা চোখের সামনে ছেলের উপর এমন পাশবিক নির্যাতন দেখে প্রাণ হারালেন—এ ঘটনা আমাদের বিবেক না জাগিয়ে পারে না। আমরা চাই, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাউদকান্দি উপজেলার মুখ্য সংগঠক মো. ফয়সাল শিকদার বলেন, “এটি নিছক পারিবারিক শোক নয়—এটি সমাজের একটি বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।”