
নড়াইল জেলার কালিয়ায় একটি হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাঠ ভরা পাকা ধান কাটতে দিচ্ছেন না প্রতিপক্ষের লোকজন। এমনকি এলাকায় মাইকিং করে ধান কাটতে নিষেধ করার অভিযোগ উঠেছে।
ফলে পুরুষশুন্য গ্রামটিতে প্রায় ৮০ বিঘা জমির পাকা ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নড়াইল কালিয়া উপজেলার বাবলা হাচলা ইউনিয়নের
কাঞ্চনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে । পুরুষ শুন্য এলাকায় নারীরা ও ধান কাটতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারগুলো বলেছে, চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হবে তাদের।
নিজেদের জমির ধান কাটতে না পারায় কান্নায় ভেঙে পড়েন কিষানি জোৎস্না বেগম। তিনি বলেন,“দিন-দুপুরে এলাকায় মাইকিং করে হুমকি দেওয়া হলো মিলন মোল্যার দলের কেউ ধান কাটতে গেলে দেখে নেওয়া হবে। আমরা ভয়ে মাঠেই যাইনি। কিন্তু ওই রাতেই দেখি, আমাদের ক্ষেতের পাকা ধান গায়েব! কে বা কারা সব কেটে নিয়ে গেছে।”
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, “কদিন আগেই আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছিল। প্রাণভয়ে আমরা আশ্রয় নিয়েছি অন্য গ্রামে। সেখানেও ঠিকমতো খাওয়া-ঘুম নেই।”
“গতকাল রাতে আবার শুনি, পিকুল শেখ আর রিকাইল শেখের লোকজন এসে বসত ঘর রান্না ঘর সব কিছু ভেঙে শেষ করে দিয়ে গেছে—যা ছিল সব ভেঙে, গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের আর কিছুই রইল না। সব শেষ।”
শাহাবাগ ইউনাইটেড একাডেমীর নবম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া খানম বলেন,প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সমস্ত বই পুড়িয়ে দিয়েছে, এখন পড়াশোনার জন্য কিছুই নেই। ভেঙে ফেলেছে আমাদের বসত বাড়ি। মাঠ থেকে কেটে নিয়ে গেছে পাকা ধান। আমাদের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আমরা পরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
স্থানীয়রা জানান, ইছহাক শেখের দুই ছেলে, আজিবর শেখ ও মুজিবর শেখের প্রায় ৫০ শতক জমির ধান কেটে নেয়া হয়েছে। একইভাবে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হুমায়ুন শেখের ৩০ শতক জমির ধানও বাদ পড়েনি। বর্তমানে গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায়, চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই গ্রামের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। রাতের অন্ধকারে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে, এবং লুট করা হচ্ছে ঘরের আসবাবপত্রসহ জালনা দরজার লোহার গেট।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পিকুল শেখ মুঠো ফোনে বলেন,আমি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ায় আমাদের দলীয় লোকদের আমি বিভিন্নভাবে সাহায্যে সহযোগিতাতা করছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ফাঁসাতে এহেন অপপ্রচার করেছেন তারা।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ধান কাটা বা ঘর ভাংচুর বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাননি।অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উলেখ্য,গত (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ফরিদ মোল্যা (৫৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।
হত্যা পরবর্তীতে প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে । ওই রাতেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযানে সংঘর্ষের সাথে জড়িত স্থানীয় উভয় পক্ষের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে।