
হারাগাছ মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি মোঃ আইয়ুব আলী
২০২৫–২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২ জুন (সোমবার) বিকেলে সংসদে প্রস্তাবিত এই বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব ঘাটতি বিবেচনায় এনে এবারের বাজেটকে ব্যয়সঙ্কোচনমুখী হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
রাজস্ব ও ঘাটতি
বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
আয়কর কাঠামোতে পরিবর্তন
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রযোজ্য প্রথম ধাপের করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। করজালে নতুন করদাতাদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রথমবার রিটার্ন দাখিলকারীদের জন্য সর্বনিম্ন কর নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১,০০০ টাকা।
সরকারি ট্রেজারি বন্ডে উৎসে কর দ্বিগুণ করার পাশাপাশি প্রায় ১৫০টি আমদানি পণ্যে ২ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (AIT) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, সাধারণ মানুষের স্বস্তির কথা বিবেচনায় রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে উৎসে কর অর্ধেক করার সুপারিশ এসেছে বাজেটে।
সামাজিক সুরক্ষা ও উন্নয়ন খাতে গুরুত্ব
বাজেটে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ও শিক্ষা খাতে ভর্তুকির মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দের কোনো বড় কাটছাঁট হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধিও দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক সহায়তা
এ বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জাপান। তারা বাংলাদেশকে মোট ১.০৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ৪১৮ মিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারে, ৬৪১ মিলিয়ন ডলার রেলপথ উন্নয়নে এবং ৪.২ মিলিয়ন ডলার শিক্ষাখাতে ব্যয় হবে।
পর্যবেক্ষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেটটি বাস্তববাদী হলেও এর সফল বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার, দুর্নীতির রোধ এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। নতুবা এই বাজেট শুধুই কাগজে থাকবে—বাস্তব রূপ পাবে না।