
আজ দুপুরে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে একটি কাঠের মালবাহী ট্রলার (কাঠবোট) নলচিরা ঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যদিও আবহাওয়া পূর্বাভাস ছিল প্রতিকূল এবং ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা ছিল, তথাপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ট্রলারটিতে যাত্রী তোলা হয়।
ট্রলারটিতে ছিলেন ৪৬ জন পুরুষ, ৭ জন নারী এবং ৪ জন শিশু, অর্থাৎ মোট ৫৭ জন যাত্রী। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে যাত্রী ডেকে ডেকে উঠানো হয়।
নদীপথে অগ্রসর হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মাঝনদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে ট্রলারটি। তখন আবহাওয়া ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে থাকেআকাশ কালো হয়ে আসে, দমকা হাওয়ার সাথে নদীতে উঁচু উঁচু ঢেউ উঠতে থাকে। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, শুরু হয় চিৎকার আর কান্নাকাটি। এর মধ্যেও ট্রলারের মাঝি কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ সদস্যদের ভয়ে ফিরে না গিয়ে অন্যদিকে ট্রলার ঘুরিয়ে ফেলেন।
একপর্যায়ে যাত্রীদের মধ্য থেকে ছাইদুল ইসলাম সাহস করে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-কে ফোন করে পুরো পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ইউএনও স্যার তাৎক্ষণিকভাবে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে উদ্ধার অভিযানের নির্দেশ দেন।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই কোস্টগার্ড সদস্যরা ছাইদুল ইসলাম -এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সঠিক অবস্থান চেয়ে নেন। তিনি দ্রুত লোকেশন জানিয়ে দেন, যার ভিত্তিতে প্রায় ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যে দুটি কাঠবোট গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারে পৌঁছায়। একটিতে ট্রলারটিকে টেনে নেওয়া হয়, আর অন্যটিতে থাকা কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের উদ্ধার করে নিরাপদভাবে নলচিরা ঘাটে পৌঁছে দেন।
উদ্ধারপ্রাপ্ত যাত্রীদের একজন বলেন:
মাত্র কিছু টাকা লাভের আশায় কিছু মাঝি মানুষকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার। এমন পরিস্থিতি আর যেন না হয়। আমরা হাতিয়ার সাধারণ মানুষ এর থেকে মুক্তি চাই। আজ ইউএনও স্যার ও কোস্টগার্ড না থাকলে আমরা হয়তো বাঁচতাম না।”
এই সাহসী ও মানবিক উদ্যোগের জন্য ছাইদুল ইসলাম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন: আমি হাতিয়া উপজেলার ইউএনও স্যার, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত ও সহযোগিতায় আমরা নিরাপদে বেঁচে ফিরেছি।”
স্থানীয় জনগণ দাবি করেছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী বহনকারী নৌযান মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একইসাথে, অনেকে আরও একটি বাস্তবসম্মত প্রস্তাব সামনে এনেছেন—
বর্ষা মৌসুমে যখন নদী উত্তেজিত থাকে এবং ঝুঁকি বেড়ে যায়, তখন হাতিয়াবাসীর যাতায়াতের জন্য কাঠবোটের পরিবর্তে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ‘স্টিমার’ সার্ভিস বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সরকার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্থানীয় জনগণের আহ্বান—হাতিয়ার মত দ্বীপ অঞ্চলে বর্ষাকালে স্টিমার ও সরকারি নৌযান চলাচল নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে নিশ্চিত করা হোক, যেন সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল না করে।