
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে পশু কোরবানির সরঞ্জাম জোগান দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বাজার বিশেষ করে ভোলা কালিনাথ রায়ের বাজার কামার পট্টি খুব জাঁকজমট ভাবে কামারশালার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে জানান দোকান মালিক সবুজ কমকার, খোকন কর্মকার। দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। লোহার আওয়াজ, হাপরের ফোঁসফাঁস আর হাতুড়িপিটার টুংটাং শব্দে মুখরিত এখন জেলার বিভিন্ন উপজেলার সকল কামারপাড়া গুলো।
সরেজমিনে গিয়ে ভোলার উত্তরের ঐতিহ্যবাহী গরুর হাট ইলিশা বাজার ও জংশন বাজার পরানগঞ্জ বাজার কামার পট্টি গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, হাপর দিয়ে কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে লাল করে ছোট-বড় নানা আকারের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছুরি, বটি, দা, চাপাতি ইত্যাদি। নতুন অস্ত্র বানানোর পাশাপাশি পুরনো অস্ত্র শান দেওয়ার কাজও করতে হচ্ছে সমানতালে। ক্লান্তহীনভাবে চলছে কাজ, কথা বলার ফুরসত নেই কারো। এত পরিশ্রমেও তাদের মুখে হাসি ফুটছে। জানা যায়, জেলার ৮টি উপজেলা বিভিন্ন স্থানের কামারশালায় সারা বছরই লোহার তৈরি দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কোদাল, কুড়াল, কাঁচি পাওয়া যায়। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অধিকাংশ উপজেলার কামারপাড়া গুলোতে পুরনো যন্ত্রপাতিতে বেড়েছে শানের কাজ। বিক্রেতারা জানান, পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, দা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ৬০০টাকা, চাপাতি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ অন্য বছরের তুলনায় দা, বটি, ছুরি, চাপাতির দাম একটু বেশি। ভোলা সদর উপজেলার কালীনাথ রায়ের বাজারে সবচেয়ে বড় কামার পট্টি কামার রামু কর্মকার জানান, কয়লা সষ্কট ও দা-বটি বানানোর লোহা আর ইস্পাতের দাম বৃদ্ধি তাই দাম একটু বেশি ।
ঈদ এলে আমাদের কেনা বেচা বেড়ে যায়। ঈদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে থেকে কাজের চাপে দম ফেলার অবস্থা থাকে না। তবে শানের কাজ বেশি। সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এছাড়াও বাসু কর্মকার জানান, এ মুহূর্তে কারিগর সংকট। এ পেশায় এখন কেউ আসতে চায় না। অন্য লেবার দিয়ে কাজ করাতে হয়। গত বছরের তুলনায় কেনা বেচা একটু বেশি । এ বছর চায়না অনলাইনে স্টিলের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনছে অনেকে। অন্যদিকে উপজেলা গুলো ঘুরে একই চিত্রের দেখা মেলে। বোরহানউদ্দিন বাংলাবাজার কর্মকারদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান , সর্বত্র কোরবানী ঈদ আসলে আমাদের এ পেশার মানুষদের একটু ব্যস্ততা বেড়ে যায়। অন্য সময় অর্থ্যাৎ বছরের বেশির ভাগ সময় অলস ভাবে কাটাতে হয় আমাদের। লালমোহন উপজেলার আরেক কর্মকার শুক লাল বলেন, বর্তমান কাজের চাপ বেশি তবে এ বছরে অন্য বছরের তুলনায় দাম কম কারন এ বছর স্টিলের অনেক চাপাতি, ছুরি কিনছে ক্রেতারা, তবে তাদের ওসব জিনিসের থেকেও অনেক ভালো মানের জিনিস তৈরি করছেন তারা। ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় খুুশি কর্মকাররা৷ কর্মকার কমিটির সভাপতি সাংবাদিক কে জানান বর্তমানে এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন। তারা বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব,তা না হলে একদিন বিলুপ্তের পথে হারিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।