
বাগেরহাটে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলার হাত-পায়ের রগ কর্তন করেছে সন্ত্রাসীরা। চাঁদার দাবিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের মোট ১০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আহত রাসেল শেখ বাগেরহাট সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাট জেলা সদরের বেমরতা ইউনিয়নের দত্তকাঠি গ্রামে। ১৩ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকার জব্বার শেখ এর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, শরিফা বেগম (৬৫), রাজিবুল হক (৪০), রিয়াদুল হক (৪২), ইনামুল হক( ৩৩), রাশেদুল হক (৩৩), রাসেল শেখ (৩৪), নাজমুল হোসেন (৪০) এবং হেলেনা বেগম (৫৭)। গুরুতর আহত শরিফা বেগম ও রাজিবুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি আহতদের বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপরপক্ষে পলক ও মোস্তাক নামে দুইজন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত পলককে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সন্ত্রাসী পিনজু শেখ, মোস্তাক ফকির, সাব্বির শেখ, লুৎফর মল্লিক, সজীব শেখ, রাজিব শেখ, শান্ত শেখ, মিঠু শেখ, হুমায়ুন শেখ, লেলিন মল্লিক ও আজমাঈন সহ ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পূর্বে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভুক্তভোগীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় শরিফা বেগমের হাত এবং পায়ের রগ কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা। বাকিদের খুন করার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। তারা বসতবাড়ি ভাঙচুর করে, মৎস্য খামারের বাসা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়, দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং মৎস্য খামারে থাকা আনুমানিক পাঁচ লক্ষ টাকার বাগদা গলদা চিংড়িসহ অন্যান্য মাছ লুট করে নিয়ে যায়।
মুখে মারাত্মক জখম সেই সাথে ১২-১৩ টি সেলাই নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে গুরুতর আহত এনামুল শেখ সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসী পিঞ্জু শেখের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের মৎস্য খামার লুট করার পরিকল্পনা এবং আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি এবং ঘের লুটে বাধা দেওয়ায় ঘটনার দিন পিঞ্জু ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের উপর হামলা করে। হামলায় শরিফা বেগমের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় তারা। রাজিবুল হকের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে ও কুপিয়ে যখম করেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছি। পিনজু স্থানীয় বিএনপি নেতা এবং সে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক সাহেবের লোক বলে দাবি করে। আমরা এই সন্ত্রাসী বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
অভিযুক্ত পিনজু শেখ বলেন, ঘটনার সময় আমি আমার আম্মা, জয়নাল মেম্বার, ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি এবং মিঠু আমার বাড়ির সামনে বসে ছিলাম। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমার মা ভাইপো পলক এবং মামা মোস্তাকের উপর হামলা করে। তাদের হামলায় ভাইপো পলক গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আমার মা ও মামাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা কিভাবে হতাহত হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
ঘটনার বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহাবুব উল হাসান বলেন, জেলা সদরের বেমরতা ইউনিয়নের দত্তকাঠী এলাকার রাসেল শেখের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত-পূর্বক থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার পূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হবে।