
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়া গ্রামে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনা। মৃত হাকিমুদ্দিন মুন্সির ছেলে আব্দুল করিম (৪০) কে দীর্ঘদিন ধরে একটি অন্ধকার ঘরে শিকলবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার আপন বড় ভাইয়ের স্ত্রী রাহিমা বেগমের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, করিম একজন শারীরিকভাবে দুর্বল ও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। তবে চলাফেরা এবং কথাবার্তায় স্বাভাবিকতার ছাপ পাওয়া যায়। বহুদিন ধরে তাকে বসতঘরের একটি ছোট, বাতিহীন ও জানালাবিহীন ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার দুই পায়ে লোহার শিকল বাঁধা এবং ঘরের পরিবেশ ছিলো অত্যন্ত নোংরা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান,
“অনেক দিন ধরেই দেখতেছি লোকটা ঘর থেকে বের হয় না, জানালা দিয়েও তাকায় না। আজ এক প্রতিবেশী সাহস করে জানালার ফাঁক দিয়ে ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে দেয়, তখনই আমরা বিষয়টা স্পষ্ট বুঝি।”
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত রাহিমা বেগম জানান,
“ও মানসিক রোগী। মাঝে মধ্যে মারধর করে, আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থেই ওকে ঘরে শিকল দিয়ে রাখা হয়েছে।”
তবে প্রতিবেশীদের একাংশ রাহিমার এই বক্তব্যকে মিথ্যা বলে দাবি করছেন। তাদের মতে, পারিবারিক জমিজমা ও সম্পত্তির বিরোধ থেকেই করিমকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার করা হচ্ছে।
একজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,
“মানসিক রোগীর নাম দিয়ে মানুষটারে অমানবিকভাবে বেঁধে রাখা হইছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”
ঘটনার ছবি ও তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায় এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান,
“বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে এবং দ্রুত করিমের মুক্তি ও তার যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবি জানানো হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আব্দুল করিম এখনও শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমের চাপের ফলে অচিরেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে এলাকাবাসী আশা প্রকাশ করেছেন।