১১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্যানেল চেয়ারম্যান টিপছাপ দেন মাষ্টার রোলে!! মেম্বার বিক্রি করলেন অসহায় জেলেদের চাল

বরগুনায় (গত ২৬ শে জুন) সদর উপজেলার ৭ নং ঢলুয়া ইউনিয়নে  জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল  মুদি দোকানে বিক্রি করে এক ইউপি সদস্য। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ জানতে পেরে সরকারি চাল জব্দ করে ওই দোকানী ও অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সোরগোল সৃষ্টি হলে রাতের আঁধারে সরকারি বরাদ্দের  ওই চাল বিতরণের মাষ্টার রোলে উপকারভোগী নামের সামনে নিজেই টিপছাপ দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান।

সরকারি চাল কালোবাজারি করার অপরাধে দোকানী শাহীন হাওলাদার ও ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য কবির হোসেনকে আসামি করে ২৭ জুন রাতে  বরগুনা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন আরাফাত রানা।

মাষ্টার রোলে উপকার ভোগীর বদলে নিজে টিপছাপ দেওয়া ওই একই পরিযদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান।

প্রতিবেদকের কাছে থাকা তথ্য মতে, গত ২৪ জুন সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত ৮০০ জেলের মধ্যে নামমাত্র চাল বিতরণ করা হয়। বিতরণের সময় ৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য কবির হোসাইন অনিয়ম করে ১৪ বস্তা সরকারি বরাদ্দের চাল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রেখে দেয়। সরকারি বরাদ্দকৃত  চালগুলো ২৬ জুন দুপুরে বরগুনা পৌর শহরের কে জি স্কুল সড়কের জনৈক দোকানী শাহীন হাওলাদারের নিকট বিক্রি করে। দোকানী শাহীন ওইদিন বিকেলে চালগুলো তার দোকানে নিয়ে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে স্থানীয় লোকজন শাহীনের মুদি দোকানে চালগুলো দেখতে পেয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে  জানালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চালের বিষয় জানতে চাইলে শাহীন ইউপি সদস্য কবিরের নিকট থেকে চাল ক্রয়ের কথা স্বীকার করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চালগুলো জব্দ করে বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রাখেন। পরের দিন (২৭ জুন)রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদী হয়ে ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও দোকানী শাহীনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার বিষয়ট নিশ্চিত করেছেন বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান জগলুল হাসান।

ইউপি সদস্য কবির হোসেনের চুরি করা চাল জব্দের খবরে রাত সাড়ে দশটার পরে পরিষদ ভবনের সামনের ফটকে তালাবদ্ধ রেখে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) অফিস কক্ষে বসেই মাষ্টার রোলে উপকারভোগীর নামের সামনে নিজ হাতের আঙ্গুলের টিপছাপ দিতে দেখা যায় প্যানেল চেয়ারম্যান (মোকলেছুর রহমানকে)। টিপছাপ এর বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।ব্যাস্ততার কারনে মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর করতে পারেন নি বলে মন্তব্য করলেও পরক্ষনে তিনি একজনের টিপছাপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে,বলেন একজন মহিলাকে আগে চাল দেওয়া হয়েছে তার টিপছাপ রাখা হয়নি, সেই টিপছাপ দিয়েছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন থেকে চাল নেয়ার কথা নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন, ইউপি সদস্যরা যে যার ওয়ার্ডের জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত  চাল বিতরণ করেছেন। সেখানে (কবির) চাল  বিতরণ ও চাল বিক্রি করার দায়ভার একান্তই তার।

২৬ জুন দুপুরে ইউপি সদস্য (কবির হোসেন)  ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে ১৪ বস্তা জেলেদের বরাদ্দকৃত সরকারি চাল নিয়েছেন বলে সত্যতা স্বীকার করেছেন ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা  বাবুল চন্দ্র বেপারী। সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণের মাষ্টার রোলে টিপছাপ দেওয়ার প্রসঙ্গে  বলেন  মাষ্টার রোলে উপকারভোগীর টিপছাপ, চেয়ারম্যান বা অন্যকেহ দিতে পারবেন না এবং দেওয়ার সুযোগ নাই।

সরকারি চাল বিক্রি করা অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কবির হোসেন পলাতক থাকায় একাধিক বার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রির অভিযোগে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,ইউপি সদস্য (কবির হোসেন) ও শাহীন হাওলাদার নামের দু’জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি শাহীন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম চলমান আছে।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কবির হেসেন কয়েকজন জেলের চাল কমদামে কিনে এছাড়াও কিছু অনিয়ম করে ১৪ বস্তা চাল শাহীনের কাছে বিক্রি করেছিলো, শাহীনও বিষয়টি জেনে কমদামে চালগুলো কিনেছিলো। আমরা চাল গুলো উদ্ধার করি জেলেদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে, মামলায় ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও দোকানদার শাহীনকে আসামী করা হয়েছে।

তিনি মাষ্টার রোলে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে  বলেন, ওই প্যানেল চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং মাষ্টার রোলগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান পাওয়া গেলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

বাউফলে খেলাফত,মজলিসের২০২৫-এ পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে প্রার্থী ঘোষণা

প্যানেল চেয়ারম্যান টিপছাপ দেন মাষ্টার রোলে!! মেম্বার বিক্রি করলেন অসহায় জেলেদের চাল

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:২৯:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

বরগুনায় (গত ২৬ শে জুন) সদর উপজেলার ৭ নং ঢলুয়া ইউনিয়নে  জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল  মুদি দোকানে বিক্রি করে এক ইউপি সদস্য। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ জানতে পেরে সরকারি চাল জব্দ করে ওই দোকানী ও অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়াও এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সোরগোল সৃষ্টি হলে রাতের আঁধারে সরকারি বরাদ্দের  ওই চাল বিতরণের মাষ্টার রোলে উপকারভোগী নামের সামনে নিজেই টিপছাপ দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান।

সরকারি চাল কালোবাজারি করার অপরাধে দোকানী শাহীন হাওলাদার ও ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য কবির হোসেনকে আসামি করে ২৭ জুন রাতে  বরগুনা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন আরাফাত রানা।

মাষ্টার রোলে উপকার ভোগীর বদলে নিজে টিপছাপ দেওয়া ওই একই পরিযদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান।

প্রতিবেদকের কাছে থাকা তথ্য মতে, গত ২৪ জুন সদর উপজেলার ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত ৮০০ জেলের মধ্যে নামমাত্র চাল বিতরণ করা হয়। বিতরণের সময় ৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য কবির হোসাইন অনিয়ম করে ১৪ বস্তা সরকারি বরাদ্দের চাল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রেখে দেয়। সরকারি বরাদ্দকৃত  চালগুলো ২৬ জুন দুপুরে বরগুনা পৌর শহরের কে জি স্কুল সড়কের জনৈক দোকানী শাহীন হাওলাদারের নিকট বিক্রি করে। দোকানী শাহীন ওইদিন বিকেলে চালগুলো তার দোকানে নিয়ে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে স্থানীয় লোকজন শাহীনের মুদি দোকানে চালগুলো দেখতে পেয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে  জানালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চালের বিষয় জানতে চাইলে শাহীন ইউপি সদস্য কবিরের নিকট থেকে চাল ক্রয়ের কথা স্বীকার করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চালগুলো জব্দ করে বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রাখেন। পরের দিন (২৭ জুন)রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদী হয়ে ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও দোকানী শাহীনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার বিষয়ট নিশ্চিত করেছেন বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান জগলুল হাসান।

ইউপি সদস্য কবির হোসেনের চুরি করা চাল জব্দের খবরে রাত সাড়ে দশটার পরে পরিষদ ভবনের সামনের ফটকে তালাবদ্ধ রেখে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) অফিস কক্ষে বসেই মাষ্টার রোলে উপকারভোগীর নামের সামনে নিজ হাতের আঙ্গুলের টিপছাপ দিতে দেখা যায় প্যানেল চেয়ারম্যান (মোকলেছুর রহমানকে)। টিপছাপ এর বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।ব্যাস্ততার কারনে মাষ্টার রোলে স্বাক্ষর করতে পারেন নি বলে মন্তব্য করলেও পরক্ষনে তিনি একজনের টিপছাপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে,বলেন একজন মহিলাকে আগে চাল দেওয়া হয়েছে তার টিপছাপ রাখা হয়নি, সেই টিপছাপ দিয়েছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন থেকে চাল নেয়ার কথা নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন, ইউপি সদস্যরা যে যার ওয়ার্ডের জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত  চাল বিতরণ করেছেন। সেখানে (কবির) চাল  বিতরণ ও চাল বিক্রি করার দায়ভার একান্তই তার।

২৬ জুন দুপুরে ইউপি সদস্য (কবির হোসেন)  ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে ১৪ বস্তা জেলেদের বরাদ্দকৃত সরকারি চাল নিয়েছেন বলে সত্যতা স্বীকার করেছেন ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা  বাবুল চন্দ্র বেপারী। সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণের মাষ্টার রোলে টিপছাপ দেওয়ার প্রসঙ্গে  বলেন  মাষ্টার রোলে উপকারভোগীর টিপছাপ, চেয়ারম্যান বা অন্যকেহ দিতে পারবেন না এবং দেওয়ার সুযোগ নাই।

সরকারি চাল বিক্রি করা অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কবির হোসেন পলাতক থাকায় একাধিক বার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রির অভিযোগে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,ইউপি সদস্য (কবির হোসেন) ও শাহীন হাওলাদার নামের দু’জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি শাহীন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম চলমান আছে।

বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কবির হেসেন কয়েকজন জেলের চাল কমদামে কিনে এছাড়াও কিছু অনিয়ম করে ১৪ বস্তা চাল শাহীনের কাছে বিক্রি করেছিলো, শাহীনও বিষয়টি জেনে কমদামে চালগুলো কিনেছিলো। আমরা চাল গুলো উদ্ধার করি জেলেদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে, মামলায় ইউপি সদস্য কবির হোসেন ও দোকানদার শাহীনকে আসামী করা হয়েছে।

তিনি মাষ্টার রোলে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে  বলেন, ওই প্যানেল চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং মাষ্টার রোলগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমান পাওয়া গেলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।