০৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপসায় কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা, অভিযোগে প্রতারণারও ইঙ্গিত

  • আজীজুল
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৪৫:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • 9
খুলনার রূপসা উপজেলায় কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাড়ে চার লাখ টাকার চেক ডিজঅনার (বাউন্স) হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত প্রমিলা রানী বালা রূপসা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মামলাটি করেছেন উপজেলার পূর্ব বাগমারা এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম (৪২)। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ গাজীর কন্যা। বাদীপক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে রূপসা আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।
পূর্ব পরিচয়ের ভিত্তিতে নেওয়া ঋণ, চেক বাউন্স
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রমিলা রানী বালা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মনিরা বেগমের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন পাওনা টাকা ফেরত চাওয়া হলেও প্রমিলা তা পরিশোধে ব্যর্থ হন। পরে ১৭ এপ্রিল প্রমিলা রানী তাঁর ব্যক্তিগত সোনালী ব্যাংক (কাজদিয়া শাখা) হিসাব নম্বর ১৩৬০১০১৪৬১৩ থেকে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়।
চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর মনিরা বেগম আইনি নোটিশ পাঠান। কিন্তু নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে কোনো উত্তর না পাওয়ায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে মামলা গ্রহণ
চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত এই মামলাটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, চেক বাউন্স হলে সেটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, চেকের দ্বিগুণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে অভিযুক্তকে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
আরও অভিযোগ, শৃঙ্খলা ভঙ্গের শঙ্কা
এটাই প্রথম নয়—স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রমিলা রানী বালা এর আগে রূপসা উপজেলার নৈহাটি এলাকার তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও সাত লাখ টাকা ঋণ নেন এবং সময়মতো তা পরিশোধ না করায় বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হয়। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি ব্যক্তিগত লেনদেন ঘিরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যা এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনে প্রতারণার অভিযোগ গুরুতর। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এবং সিভিল সার্ভিস আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা যদি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হন, তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে বরখাস্ত, ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, পদাবনতি বা অন্যান্য শাস্তি অন্তর্ভুক্ত।
প্রশাসনের নীরবতা, প্রতিক্রিয়া মেলেনি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রমিলা রানী বালার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস কিংবা খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এখন দেখার বিষয়, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা গ্রাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাণীনগরের তরিকুল ইসলাম

রূপসায় কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা, অভিযোগে প্রতারণারও ইঙ্গিত

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৪৫:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
খুলনার রূপসা উপজেলায় কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাড়ে চার লাখ টাকার চেক ডিজঅনার (বাউন্স) হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত প্রমিলা রানী বালা রূপসা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মামলাটি করেছেন উপজেলার পূর্ব বাগমারা এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম (৪২)। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ গাজীর কন্যা। বাদীপক্ষের আইনজীবীর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে রূপসা আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।
পূর্ব পরিচয়ের ভিত্তিতে নেওয়া ঋণ, চেক বাউন্স
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রমিলা রানী বালা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মনিরা বেগমের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন পাওনা টাকা ফেরত চাওয়া হলেও প্রমিলা তা পরিশোধে ব্যর্থ হন। পরে ১৭ এপ্রিল প্রমিলা রানী তাঁর ব্যক্তিগত সোনালী ব্যাংক (কাজদিয়া শাখা) হিসাব নম্বর ১৩৬০১০১৪৬১৩ থেকে একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়।
চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর মনিরা বেগম আইনি নোটিশ পাঠান। কিন্তু নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে কোনো উত্তর না পাওয়ায় তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে মামলা গ্রহণ
চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত এই মামলাটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইন, ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, চেক বাউন্স হলে সেটি ফৌজদারি অপরাধ। এই অপরাধে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড, চেকের দ্বিগুণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে অভিযুক্তকে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
আরও অভিযোগ, শৃঙ্খলা ভঙ্গের শঙ্কা
এটাই প্রথম নয়—স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রমিলা রানী বালা এর আগে রূপসা উপজেলার নৈহাটি এলাকার তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকেও সাত লাখ টাকা ঋণ নেন এবং সময়মতো তা পরিশোধ না করায় বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হয়। একই সঙ্গে আরও কয়েকটি ব্যক্তিগত লেনদেন ঘিরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যা এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনে প্রতারণার অভিযোগ গুরুতর। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এবং সিভিল সার্ভিস আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা যদি ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হন, তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে বরখাস্ত, ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, পদাবনতি বা অন্যান্য শাস্তি অন্তর্ভুক্ত।
প্রশাসনের নীরবতা, প্রতিক্রিয়া মেলেনি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রমিলা রানী বালার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস কিংবা খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এখন দেখার বিষয়, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কী ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।