
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিলুপ্তির পথে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্প। কালের বিবর্তনের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেশিনে ভাজা প্যাকেটজাত মুড়ি বাজারজাত করনের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি শিল্প। মুড়ি ভেজে ও মুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে ফুলবাড়িয়া, খলিসাজানি, বহেরাতলী এলাকার শতাধিক পরিবার। সারা বছর মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করলেও খেয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না । পবিত্র রমজান মাসে মুড়ির চাহিদা বেশী থাকার কারনে মুড়ির উৎপাদন ও বিক্রি বেড়ে যায়। এ সময় মুড়ি তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। রমজান মাসে দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা বস্তা ভর্তি মুড়ি নিয়ে যায়। এলাকার শতাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত। মুড়ি ভাজার জন্য বিনা -৭, বরিশাল থেকে আনতে হয়, মোথা ধান কোয়াকাটা থেকে সংগ্রহ করতে হয়, ২৯ নম্বর ধান মুড়ি ভাজার জন্য ভালো হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্যাকেটজাত করন মুড়ি বাজার দখল করে রেখেছে। মেশিনে তৈরীর মুড়ির স্বাদ তেমন ভালো হয় না। হাতে ভাজা মুড়ি খেতে সুস্বাদু ও মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়। মুড়ির ধান, কাঠ,বালু,মাটির হাঁড়ি সহ বিভিন্ন দাম বেড়েছে। সেই অনুপাতে বাড়েনি মুড়ি দাম। মোকছদ আলী জানায়, চুলার প্রচন্ড তাপে মুড়ি ভাজতে কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন চুলায় মুড়ি বাজার কারনে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। মুজুরী কম থাকায় অনেকই মুড়ি ভাজা ছেড়ে দিয়েছে। মুড়ি ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন জানায়, প্যাকেট জাত মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির খরচ বেশী পড়ে। ফলে হাতে ভাজা মুড়ির কারিগররা সংকটে পড়েছে। মুড়ি ব্যবসায়ী নুরুল হক জানায়, মুড়ির ধানের দাম বৃদ্ধি, মুড়ি ভাজার উপকরনে র দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকার পরও খরচ বেশী পড়ায় মুড়ি ভাজার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। হাবেল উদ্দিন, মইজ উদ্দিন জানান, মুড়ি ভাজার টাকায় এখন সংসার চলে না। অনেকেই মুড়ি ভাজা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মেশিনের সাহায্যে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মুড়ি উৎপাদিত হয়। বাজারে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকার পরও খরচ বেশী পড়ার কারনে হাতে ভাজা মুড়ি বিলুপ্তর পথে ।হাতে ভাজা মুড়ি না পেয়ে মানুষ প্যাকেটজাত মুড়ি কিনছে। হাতে ভাজা মুড়ির ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।