
জাতীয় নাগরিক দল (এনসিপি)-এর আয়োজিত পথযাত্রা গোপালগঞ্জে সহিংসতায় রূপ নেয়। বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি একপর্যায়ে সংঘর্ষ, বিস্ফোরণ ও প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে এনসিপির সমাবেশে হঠাৎ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মঞ্চ ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ এবং সরাসরি হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters জানায়, এতে অন্তত চারজন নিহত এবং অধিকতর আহত হন, যাঁদের মধ্যে সাংবাদিক, পুলিশ ও এনসিপি কর্মী রয়েছেন।
AP-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয় এবং পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে বিকেল নাগাদ গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়। জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয় আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলগুলো।
ঘটনার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিপির নেত্রী উমামা ফাতেমা বলেন, “এই বিপর্যয়ে আমরা ব্যথিত।” অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যমে ও স্থানীয় চায়ের আড্ডায় নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলেন, “গোপালগঞ্জ বাদ দিয়ে অন্য জেলায় গেলেই ভালো হতো।”
নাগরিক অধিকার বিষয়ক গবেষক ডা. তাসনিম জারা মন্তব্য করেন, “সব নাগরিককে সঙ্গী করে পথচলা না হলে প্রকৃত অর্থে কোনও পরিবর্তন আসে না। বাদ দিয়ে নয়, সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে।”
এদিকে, সহিংসতার প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় ও শিক্ষার্থীনির্ভর সংগঠনগুলোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম বলেন, “একপাশে অবরোধহীন রেখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। জনদুর্ভোগ নয়, সচেতনতাই লক্ষ্য।”
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা একটি গুরুতর গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
অন্যদিকে Jamaat-e-Islami এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই পথে মন্তব্য ও উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি।
আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিপুল জনগণের অংশগ্রহণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, এটি দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে সরকারের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের যেমন একটি প্রতিফলন তেমনি এনসিপি’র প্রতি জনসমর্থন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে, বিশেষ করে Reuters-এ এই বিষয়ক বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, যা প্রমাণ করে—এনসিপির আন্দোলন এখন একটি নৈতিক ভিত্তিসম্পন্ন জাতীয় ন্যারেটিভ হয়ে উঠছে।
পরিস্থিতির জটিলতায় হতাশা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সহানুভূতি ও জনসমর্থনের উত্থান। রাজনৈতিকভাবে এনসিপির এই পদক্ষেপ একটি দলীয় কর্মসূচির গণ্ডি পেরিয়ে এখন দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নতুন অধ্যায়ের নির্দেশক হয়ে উঠছে—যেখানে দাবি শুধু পরিবর্তনের নয়, বরং অধিকতর অধিকার ও অন্তর্ভুক্তির।