০৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সদরপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন

  • এস এম আলমগীর
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
  • 532
কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের দেশের সিংহ ভাগ চাহিদা পূরন করে ফরিদপুর জেলা। তারই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বেড়েছে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে এ বীজের বাজারদর আকাশছোঁয়া। তাই দিন দিন পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকেই। কৃষকরা এবার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন। তাই পেঁয়াজ বীজের গাছ পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
উপজেলার কৃষ্ণপুর, সদরপুর, ঢেউখালি ও চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণমানে বেশ ভালো। তাই এখানকার পেঁয়াজ বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব এলাকায় পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। এতে করে তাদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, জমি চাষ, বীজ, রোপণ খরচ, সার ও কীটনাশক, সেচ, আগাছা দমন, বাঁশ, সুতলিসহ এবার প্রতি বিঘায় খরচ দাঁড়াবে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মন বীজ পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ সর্বনিম্ন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে পারে।
উপজেলা ঢেউখালী ইউনিয়নে পশ্চিম চন্দ্রপাড়া গ্রামে পেয়াজ চাষী দেলোয়ার খালাসী বলেন, গত বছর এক একর জমিতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। প্রতি একরে গড়ে ৩০০ কেজি বীজ পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া গত বছর মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে। এ বছর বীজের দাম কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছি।
চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের কৃষক রফিকুল সরদার বলেন, এ বছর ৪৩ শতক জমিতে আমি পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি। বিভিন্ন রোগবালাইয়ের জন্য কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় লাখ টাকার ওপরে বীজ বিক্রির আশা করছি।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মটুকচর গ্রামের কৃষক মেতালেব হোসেন বলেন, এ বছর বীজ, সার ও সেচ কাজে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিককের মজুরি বেশি হওয়ায় বীজ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তবে সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের কৃষক পারভেজ মিয়া বলেন, গত বছর বীজ বিক্রি করে লাভ হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। তাই এ বছর নিজের ও লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করেছি পেঁয়াজ বীজের। এক বিঘা জমিতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার টাকা। এই ফসলের পরিচর্যা বেশি লাগে। পরিচর্যার অভাব হলে ফলন কমে যাবে। সময় মতো কীটনাশক দিতে হবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় জানান, উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর থেকে পেয়াজ বীজ চাষীদের মাঝে প্রনোদনার আওতায় বীজ সার ও  কারিগরি প্রশিক্ষনসহ দেয়া হয়েছে সব ধরনের সহযোগীতা। তাই কৃষকরা গত বছর পেয়াজ বীজ ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর বীজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়রে মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে ৩শ ৮০ হেক্টের জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০ হেক্টের বেশি।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

“শেখ হাসিনাতেই আস্থা” লেখা লিফলেট বিতরণের অপরাধে নিষিদ্ধ সংগঠনের সভাপতি গ্রেফতার

সদরপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন

পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের দেশের সিংহ ভাগ চাহিদা পূরন করে ফরিদপুর জেলা। তারই ধারাবাহিকতায় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বেড়েছে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে এ বীজের বাজারদর আকাশছোঁয়া। তাই দিন দিন পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকেই। কৃষকরা এবার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন। তাই পেঁয়াজ বীজের গাছ পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
উপজেলার কৃষ্ণপুর, সদরপুর, ঢেউখালি ও চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণমানে বেশ ভালো। তাই এখানকার পেঁয়াজ বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব এলাকায় পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। এতে করে তাদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, জমি চাষ, বীজ, রোপণ খরচ, সার ও কীটনাশক, সেচ, আগাছা দমন, বাঁশ, সুতলিসহ এবার প্রতি বিঘায় খরচ দাঁড়াবে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা। প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মন বীজ পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ সর্বনিম্ন দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে পারে।
উপজেলা ঢেউখালী ইউনিয়নে পশ্চিম চন্দ্রপাড়া গ্রামে পেয়াজ চাষী দেলোয়ার খালাসী বলেন, গত বছর এক একর জমিতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকার মতো। প্রতি একরে গড়ে ৩০০ কেজি বীজ পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া গত বছর মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হয়েছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে। এ বছর বীজের দাম কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছি।
চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের কৃষক রফিকুল সরদার বলেন, এ বছর ৪৩ শতক জমিতে আমি পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি। বিভিন্ন রোগবালাইয়ের জন্য কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় লাখ টাকার ওপরে বীজ বিক্রির আশা করছি।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মটুকচর গ্রামের কৃষক মেতালেব হোসেন বলেন, এ বছর বীজ, সার ও সেচ কাজে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিককের মজুরি বেশি হওয়ায় বীজ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তবে সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজের আবাদ আরো বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের কৃষক পারভেজ মিয়া বলেন, গত বছর বীজ বিক্রি করে লাভ হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। তাই এ বছর নিজের ও লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করেছি পেঁয়াজ বীজের। এক বিঘা জমিতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার টাকা। এই ফসলের পরিচর্যা বেশি লাগে। পরিচর্যার অভাব হলে ফলন কমে যাবে। সময় মতো কীটনাশক দিতে হবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় জানান, উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর থেকে পেয়াজ বীজ চাষীদের মাঝে প্রনোদনার আওতায় বীজ সার ও  কারিগরি প্রশিক্ষনসহ দেয়া হয়েছে সব ধরনের সহযোগীতা। তাই কৃষকরা গত বছর পেয়াজ বীজ ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর বীজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়রে মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে ৩শ ৮০ হেক্টের জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩০ হেক্টের বেশি।