০৮:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রূপগঞ্জে শ্রমিক-যৌথবাহিনী সংঘর্ষে আহত ৫০ বিনা নোটিশে ছাঁটাই, বেতন-বোনাস বকেয়া—অসন্তোষ থেকে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি

  • MD Tariqur Rahman Rezuan
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০১:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • 233
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে টানা তিন ঘণ্টা ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায় এই সংঘর্ষ ঘটে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন কারখানার শ্রমিক, সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা।
এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পরে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ছাঁটাই-দাবি ঘিরেই উত্তেজনার শুরু
ঘটনার সূত্রপাত রবিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্ট কারখানার কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, ঈদের আগে বিনা নোটিশে শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে গত মার্চ মাসের বেতন-বোনাসও পরিশোধ করা হয়নি বলে দাবি শ্রমিকদের।
বুধবার সকাল থেকেই চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে যোগ দেন। একপর্যায়ে তারা কারখানা ছেড়ে মহাসড়কে অবস্থান নিলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
সংঘর্ষের রূপ নেয় আন্দোলন
মহাসড়ক অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে যৌথবাহিনী লাঠিচার্জ করে। শুরু হয় সংঘর্ষ।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ সহিংসতায় অন্তত ৫০ জন আহত হন, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট, শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ১৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক।
শ্রমিকদের অভিযোগ: ‘বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জ’
রবিনটেক্সের কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি-দাওয়া নিয়ে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ করেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে।” তারা আরও জানান, কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা বা নোটিশ ছাড়া শ্রমিকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন।
মালিকপক্ষের বক্তব্য: ‘আইন মেনেই ছাঁটাই, ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরাই’
তবে কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আদনান শামস ভিন্ন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “শ্রম আইন অনুযায়ী ১০-১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়, কারখানায় ভাঙচুর করে এবং কর্মকর্তাদের মারধর করে।”
তার দাবি, “কারখানার ভেতরে ভাঙচুরের পর বাইরে গিয়ে তারা যৌথবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় কিছু বহিরাগতও জড়িত ছিল বলে ধারণা করছি।”
আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছুড়েছে, আমার সরকারি গাড়িও ভাঙচুর করেছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করা হয়।”
সংঘর্ষের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও প্রশাসনের মধ্যে সুষ্ঠু সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

প্ররোচিত প্রতারণায় পরিবার নিঃস্ব

রূপগঞ্জে শ্রমিক-যৌথবাহিনী সংঘর্ষে আহত ৫০ বিনা নোটিশে ছাঁটাই, বেতন-বোনাস বকেয়া—অসন্তোষ থেকে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি

পোস্ট হয়েছেঃ ০১:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে টানা তিন ঘণ্টা ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায় এই সংঘর্ষ ঘটে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন কারখানার শ্রমিক, সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ সদস্যরা।
এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। যান চলাচল বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। পরে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ছাঁটাই-দাবি ঘিরেই উত্তেজনার শুরু
ঘটনার সূত্রপাত রবিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি গার্মেন্ট কারখানার কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, ঈদের আগে বিনা নোটিশে শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে গত মার্চ মাসের বেতন-বোনাসও পরিশোধ করা হয়নি বলে দাবি শ্রমিকদের।
বুধবার সকাল থেকেই চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনে যোগ দেন। একপর্যায়ে তারা কারখানা ছেড়ে মহাসড়কে অবস্থান নিলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
সংঘর্ষের রূপ নেয় আন্দোলন
মহাসড়ক অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে যৌথবাহিনী লাঠিচার্জ করে। শুরু হয় সংঘর্ষ।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ সহিংসতায় অন্তত ৫০ জন আহত হন, যার মধ্যে সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট, শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ১৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক।
শ্রমিকদের অভিযোগ: ‘বিনা উস্কানিতে লাঠিচার্জ’
রবিনটেক্সের কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি-দাওয়া নিয়ে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ করেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে।” তারা আরও জানান, কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা বা নোটিশ ছাড়া শ্রমিকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন।
মালিকপক্ষের বক্তব্য: ‘আইন মেনেই ছাঁটাই, ভাঙচুর করেছে শ্রমিকরাই’
তবে কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আদনান শামস ভিন্ন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “শ্রম আইন অনুযায়ী ১০-১২ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে প্রোডাকশন বন্ধ করে দেয়, কারখানায় ভাঙচুর করে এবং কর্মকর্তাদের মারধর করে।”
তার দাবি, “কারখানার ভেতরে ভাঙচুরের পর বাইরে গিয়ে তারা যৌথবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনায় কিছু বহিরাগতও জড়িত ছিল বলে ধারণা করছি।”
আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম জানান, সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছুড়েছে, আমার সরকারি গাড়িও ভাঙচুর করেছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করা হয়।”
সংঘর্ষের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও প্রশাসনের মধ্যে সুষ্ঠু সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।